ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঔষধি গুণসম্পন্ন বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির বন তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশনার সময়: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০৭

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেশন (আইইউসিএন) এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩ লক্ষ ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের ২০ ভাগ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির ২৫ ভাগ আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সম্প্রতি পরিচালিত এক সমন্বিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত আড়াই শত বছরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ। এ সংখ্যা একই সময়ে বিলুপ্তপাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপের মিলিত সংখ্যারও দ্বিগুণ।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস, কিউ ও স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার তথ্যমতে, গত ২৫০ বছরে পৃথিবী থেকে ৫৭১ প্রজাতির উদ্ভিদ হারিয়ে গেছে। একই সময়ে পশু, পাখি ও সরীসৃপ মিলে বিলুপ্ত প্রজাতির সংখ্যা ২১৭। যা ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতে ৫৭১টি উদ্ভিদের বিলুপ্তি হওয়াটাকে একটি সংখ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু আদতে এর সঙ্গে পুরা পৃথিবীর অন্য প্রাণগুলো ও জড়িয়ে আছে বাস্তুসংস্থানের কারণেই। কারণ এখনো এই গাছগুলোই অক্সিজেন ও খাদ্যের যোগানদাতা। ফলে উদ্ভিদের বিলুপ্তি অন্য প্রাণীর বিলুপ্তি ত্বরান্বিত হওয়ার কারণ। আর একটি প্রজাতির হারিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আরো হারিয়ে যায় ৩০ প্রজাতি।

উদ্ভিদ প্রজাতির এ বিলুপ্তি রোধে বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়কে ভেষজ গুণসম্পন্ন বিভিন্ন দেশীয় বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সংরক্ষণের স্থান ও সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে প্লান্ট কনজারভেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে ময়মনসিংহের জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঔষধি গুণসম্পন্ন বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদ এর সমন্বয়ে ক্ষুদ্র আকারের বন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে এটা নিয়ে পরিচিতি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আজহারুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্লান্ট কনজারভেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্লান্ট কিউরেশন ম্যানেজার সনজিত চন্দ্র বম্মণ। এ সময় কর্মসূচীর সহযোগীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে জুমে অংশগ্রহণ করেন ইন্দোনেশিয়া ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশন, ইন্দোনেশিয়ার প্রভাষক মুহাম্মদ হান্ডিগুনাওয়ান। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ময়মনসিংহ অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা মো. রিশাদ আব্দুল্লাহ।

আয়োজকরা জানান, এ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে একটি ছোট আকারে ঘন বন সৃষ্টি করা হবে। এ বনের বিশেষত্ব হলো- প্রচলিত বৃক্ষরোপণ পদ্ধতির তুনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হবে। গাছের বৃদ্ধি ১০ গুণ দ্রুত হবে এবং ফলস্বরূপ রোপণ ৩০ গুণ ঘন হবে। গাছের উচ্চতা প্রতি বছর কমপক্ষে ১ মিটার বৃদ্ধি হবে এবং তিন বছরের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে রক্ষণাবেক্ষণ মুক্ত, বন্য এবং স্থানীয় টেকসই বন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

উল্লেখ্য, বনায়ন কর্মসূচী পরিচালনার লক্ষ্যে একজন শিক্ষক ও ৩০ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে বিদ্যালয়ে একটি উদ্ভিদ সংরক্ষণ ক্লাব গঠন করেছেন তারা। এর ফলে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, প্রশাসকসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ বিভিন্ন সংরক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সক্রিয় সংরক্ষণকর্মী হিসেবে বিলুপ্তপ্রায় কিংবা হুমকির মুখে থাকা উদ্ভিদ প্রজাতিকে রক্ষা করবে বলেও জানান তারা।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ