আত্মপ্রত্যয়, স্ব-উদ্যোগ, উৎসাহ ও সহযোগীতা পেলে যেকোনো মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কখনোই ইচ্ছাশক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্মরণীয় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস, অসামান্য লেখক হেলেন কেলার, সাঁতারু বুলা চক্রবর্তীরা। তাদেরই মতো নানান প্রতিকূলতার যাবতীয় অন্তরায় অতিক্রম করে ইচ্ছাশক্তি ও স্বপ্নকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত দুজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।
অনুপ্রেরণা, প্রতিবন্ধকতা, স্বপ্ন ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা নিয়ে জানতে গেলে ইব্রাহিম আজাদ মাহি বলেন, ‘প্রথমে একটু খারাপ লাগত। কারণ সবার সাহায্য সহযোগীতা পেতাম না। বন্ধু বান্ধব ও কাছের মানুষজন বিভিন্ন ভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলত যেমন আমার দ্বারা হবে না, আমি জীবনে এগিয়ে যেতে পারব না। তখন মনের মধ্যে একটা জিদ কাজ করত। পরবর্তীতে এইসব কানে না দিয়ে পড়াশুনার দিকে ফোকাস করি। আমার তখন একটাই চিন্তা, যেভাবেই হোক আমাকে লাইফে ভালো কিছু একটা করতেই হবে। সেই জিদ নিয়ে পড়াশুনায় এগুতে থাকি। তারপর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে ভর্তির সুযোগ হয়। মহৎ ব্যাক্তিদেরকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমি পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। ওনারা যদি পারে আমিও পারব জীবনে ভালো কিছু করতে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। শিক্ষকরা ও আমার সহপাঠীরা আমার অত্যধিক খেয়াল রাখে বিভিন্ন সময়ে পাশে থেকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ভবিষ্যতে শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
আরেক শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ছোট থেকে আমার সমস্যা শুরু হয়। তবে আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখনই পুরোপুরি বুঝতে পারি আমার শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। তবুও আমি নিজের ও আমার পরিবারের অনুপ্রেরণা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি মোটামুটি ভালোই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। তবে পরীক্ষা সময় আমাকে অতিরিক্ত কিছু সময় দিলে আমার জন্য ভালো হতো। আলহামদুলিল্লাহ, শিক্ষক ও বন্ধুরা আমাকে অনেক সাহায্য করে। করোনার কারণে বর্তমানে আর্থিক সমস্যায় আছি। পড়াশোনা শেষ করে ভবিষ্যতে শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন লেখক হতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য মহদয়ের তত্ত্বাবধানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিএফ সংগঠনটি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছে। পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই তবে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করব।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ