ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
বাকৃবি ও বিনার উদ্ভাবন

বিনা ২৩ ধানের জীবনরহস্য উন্মোচন

প্রকাশনার সময়: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৪৯

লবণাক্ততা ও বন্যা সহিষ্ণু বিনাধান-২৩ এর পূর্ণাঙ্গ জীনোম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য ও বিভিন্ন জিন আবিষ্কার করা হয়েছে। ধানের জীবনরহস্য উন্মোচন দেশে এটিই প্রথম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল গবেষক এ গবেষণা পরিচালনা করেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সভাকক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। এসময় ধানের জীবনরহস্যের উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে বাকৃবির গবেষক পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, বিনার প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী মানস কান্তি শাহা গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সম্মেলনে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, সাধারণত বিনা উদ্ভাবিত জাতগুলোতে বিভিন্ন রেডিয়েশন প্রয়োগের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করা হয়। তবে এই রেডিয়েশনের প্রভাবে শুধু আমরা কি পরিবর্তন হচ্ছে তা এতোদিন জানতে পারতাম। কিন্তু জিনের কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা আগে জানা সম্ভব হতো না। আমাদের এই উদ্ভাবনের ফলে এখন থেকে যেকোনো ধানের জাতের জিন পর্যায়ে কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।

গবেষণা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান-২৩ একটি লবণাক্ত ও বন্যা সহিষ্ণু ধানের জাত। ২০১৯ সালে বাকৃবি ও বিনার গবেষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় বিনাধান-২৩ ও তা থেকে উৎপন্ন তিনটি মিউটেন্ট (রেডিয়েশন দ্বারা প্রভাবিত জাত) ধানের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয় যা বাংলাদেশে প্রথম। এই জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের ফলে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ধানের জাতে আমরা প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু ২৩টি জিন, উচ্চ ফলনশীল বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী ১৬টি জিন এবং চালের আকার-আকৃতির জন্য দায়ী ৪টি জিন শনাক্ত করতে পেরেছি। যার মাধ্যমে বিনাধান-২৩ আগের ভ্যারিয়েন্ট থেকে অধিক ফলনশীল হবে।

এই গবেষণার ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে ধানের জাতের শনাক্তকৃত জিনগুলো পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা রেফারেন্স জিনোম হিসেবে ব্যবহার এবং জিনগুলো প্রচলিত ধানের জাতে স্থানান্তরের ফলে উচ্চ ফলনশীল জাত পাওয়া যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। প্রতিবছর অতিরিক্ত এই মানুষগুলোর খাদ্য চাহিদা মেটানো কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত ফসলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমিই কেবল সবার খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। যা কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো করে যাচ্ছে। বিনা ও বাকৃবির সমন্বয়ে উদ্ভাবিত ধানের এই জিনোম সিকোয়েন্সের ফলে লবণাক্ত ও হাওড় এলাকায় ধানের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়াও দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টিসম্মত খাদ্য উৎপাদনে অতি দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে। গবেষণাটিকে যাতে দ্রুত মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান ও প্রক্টর ড. মোহাম্মদ মহির উদ্দিন। এছাড়া বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ