ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরপরই গণপরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে পরিবহণ ধর্মঘট শুরু হয়। যদিও শ্রমিক ফেডারেশন নেতা শাজাহান খান বলেন, ‘এটা ধর্মঘট নয়, লোকসানের কারণে মালিকরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছে।’ সে যাইহোক দুইদিনের ভোগান্তির পরে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে পরিবহণ সচল করা হয়। এরপর থেকেই হাফ পাসের দাবিতে ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করে। তবে সেই আন্দোলনে ঘি ঠেলে দেন ঠিকানা পরিবহণের এক হেলপার। হাফ পাস দিতে চাওয়ার, ওই শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেন হেলপার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, “আমার বাসা শনিরআখড়া। এখান থেকে কলেজের ভাড়া ১০ টাকা। প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়েই যাচ্ছি। আজকে ভুলে (কলেজ বন্ধ ছিলো) কলেজে গিয়েছিলাম, যাওয়ার সময় ঠিকানা বাসে করে গিয়েছিলাম। আজকে হেল্পার ভাড়া রাখছে ১৫ টাকা। আমি তাকে ভালো করেই বলছিলাম আমার ১০ টাকা ফেরত দিতে (২০ টাকা দিয়েছিলাম) বাট সে দেয় তো নাই উলটা বলে ‘দিমু না কি করবি কর’। এরপর চিল্লানোর পর সে বলে ‘গলা বড় করবি না, ৫ টাকা নে নাহয় নাইমা যা’। বাসের একটা মানুষও তাকে একটা কথাও বলে নাই, কেউ কিচ্ছু বলে নাই।
এরপর নামার সময় ৫ টাকা হাতে ধরায় দিয়ে বলে ‘ নে তোর টাকা, প্রতিদিনি তো আসবি একদিন ধইরা চ*** দিবো মা** কোথাকার’। এই কথা যখন বলছে বাস অলরেডি রানিং এ আমি তাকে কিছু বলার সুযোগও পাইনি আর বাসের নাম্বার নোট করার ও সুযোগ পাইনি জোরে বাস টেনে চলে গেছে।
এখন আমার কথা হচ্ছে প্রতিদিন বাসের এমন ভোগান্তিতে পরা লাগে, আমাদের উঠায় না। আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন অনেক মেয়ে যায় কলেজে। আমরা যদি এখন কিছু না বলি সামনে আরো প্রব্লেম এ পড়তে হবে। ঠিকানা, মৌমিতা আমাদের কলেজের সামনে দিয়েই যায়। আমরা সবাই মিলে যদি একদিন রাস্তা টা ঠিকানা আর মৌমিতার জন্য বন্ধ করে দেই, আমার মনে হয় এদের তেজ কমবে। আমি আশা করছি, এই কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে আমার প্রতি এই আচরণের প্রতিবাদ তোমরা করবে।”
বদরুন্নেসার শিক্ষার্থীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছে তার সহপাঠিরা। শুধু সহপাঠিরাই নয় সাথে ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
রোববার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বকশি বাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ থেকে ধর্ষণের হুমকি প্রদানকারী বাস হেল্পারের শাস্তি ও সব গণপরিবহনে হাফ পাশ নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবি জানায়। পরে অবশ্য বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহারের আশ্বাসে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি:
১. ঠিকানা বাসের মালিককে ক্ষমা চাইতে হবে এবং অভিযুক্ত হেলপারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২. সব ধরণের গণপরিবহনে হাফ পাশ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. গণপরিবহনে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে।শিক্ষার্থীরা জানায়, আগামি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা পুনরায় আন্দোলনে যাবেন। বদরুন্নেসা কলেজের মনসুর জাহান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তাদের স্পর্ধা দেখে আশ্চর্যান্বিত হই। আমার বোনকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি। এর বিচার না নিয়ে আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
এ বিষয়ে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহার শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমরা তোমাদের অভিভাবক, তোমাদের সকল দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি। যদি বাস কর্তৃপক্ষ তোমাদের দাবি না মানে তাহলে আমরা তোমাদেরকে সাথে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবো।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ