টিউশনসহ নানান কাজে ক্যাম্পাসের বাহিরে গিয়ে গাড়িতে চড়লেই আগের চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ ভাড়া গুণতে হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের। নগরে সিএনজি চলাচলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক বিভাগের কয়েক বছর আগে নেওয়া অনধিক তিনজন যাত্রী বহন ও গ্রিল লাগানোর নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর নানা কৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সিএনজি চালকেরা। তিনজন যাত্রী বহনে তারা পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন। কখনো আবার পাঁচজন যাত্রী নিয়েও সমপরিমাণ ভাড়া আদায়ে হেনস্তা করছে শিক্ষার্থীদের।
জরিমানা ও মামলার স্বীকার হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা মানতে বাধ্য হয়ে গত ৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল সিএনজি অটোরিকশা চালিত মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। কিছুদিন পর সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিভিন্ন কৌশলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে থাকে তারা।
একাধিক সিএনজি চালক সূত্রে জানা যায়, বন্দর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত পাঁচজন যাত্রী বহনে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ টাকা করে মোট ১০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। বর্তমানে তিনজন যাত্রী থেকে ৩০ টাকা ভাড়া নিয়েও তারা আগের চেয়ে ১০ টাকা কম পাচ্ছেন বলে জানান তার। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মদিনা মার্কেটের ভাড়া ৫ টাকার বদলে ১০ টাকা, আম্বরখানা পর্যন্ত ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা এবং বন্দর পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ বা ৩০ টাকা নিচ্ছেন। তবে অনেক সময় তারা তিনজনের জায়গায় সুবিধামতো পাঁচজন পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। তখন মাঝপথে কেউ নেমে গেলে তার কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার পর খালি হয়ে যাওয়া সিটটিতে নতুন করে যাত্রী উঠিয়ে তার কাছ থেকেও প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ ভাড়া আদায় করে তারা। এভাবে পূর্বেও চেয়ে আয় বেড়েছে সিএনজি চালকদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, সিএনজিতে উঠলে এখন ড্রাইভাররা পাঁচ টাকার ভাড়া দশ টাকা দাবি করে। বেশি ভাড়া নেওয়া কারণ জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখায় আর বেশির ভাগ সময় খারাপ আচরণ করে। পাঁচ জন করে যাত্রী নেয়ার কথা বললে তারা বলে পুলিশ আমাদেরকে মামলা দেয়। আবার দেখা যায় পাঁচজন করে যাত্রী নেয়ার পরে তাদেরকে আগের ভাড়া দিতে গেলে পাঁচজন নিয়েছে এতে মামলার রিক্স তাদের বলে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে চায়। আবার কেউ নেমে ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ন্যায্য টাকা ফেরত চাওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে। ফেরত চাইলে পূর্বের ভাড়া রেখে বাকি টাকা ফেরত দেয়, না হয় দেয় না।
৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টিলাগড়ে টিউশন করে আমি মাস শেষে ৪০০০ টাকা বেতন পাই। টিউশনের টাকা দিয়ে আমার মাসিক সব খরচ চলে। মেস থেকে টিলাগড় পর্যন্ত প্রতিদিন ১’শ টাকা করে ১৬ দিনে আমার ১৬’শ টাকা খরচ হয়। টিউশনের বেতন থেকে মাস শেষে যা টাকা থাকে তা দিয়ে মেস ভাড়া ও খাওয়া খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে টাকা আনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আমরা জালালাবাদ থানা ও কোতোয়ালী মডেল থানার ওসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা নিজেরাও সেখানে যোগাযোগ করেছি। সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্য বলেছি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ট্রাফিক বিভাগের আইন অনুযায়ী প্রতি সিএনজিতে ড্রাইভারসহ মোট চারজন চড়তে পারবে। এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে। ড্রাইভাররা আগে পাঁচজন যাত্রীর প্রতিজন থেকে যে ভাড়া নিত এখনও সমপরিমাণ ভাড়া নিবে। তিনজন যাত্রী নিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করতে পারবে না। আমাদের ট্রাফিক পুলিশদের কাছে এ নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো ভুক্তভোগী আমাদের ট্রাফিক পুলিশদের কাছে, পুলিশ ফাঁড়িতে, অভিযোগ বক্সে যেকোনোভাবে অভিযোগ করলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ