স্বেচ্ছাশ্রম বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম সাধারণত স্বার্থহীন কোনো কাজকে বোঝায় যা একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো আর্থিক বা সামাজিক লাভের জন্য করে না। একজন ব্যক্তি বা দল বা সংস্থার সুবিধাৰ্থে করে। স্বেচ্ছাসেবী কাজ দক্ষতা বিকাশের জন্যও অতি পরিচিত এবং সৎকর্ম প্রচার অথবা মানুষের জীবনমান উন্নত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। তবে বর্তমানে পৃথীবির মানুষগুলো ক্রমশ স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। কারোরই যেনো কাউকে দেখার সুযোগ নেই। সবাই সবার মতো নিজের আখের ঘোছাতে ব্যাস্ত। এই যখন অবস্থা তখন অসহায়, নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী। যারা স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর ও শোষনহীন সমাজের। কারো দ্বারস্থ না হয়ে নিজেদের টিউশনি কিংবা বাবা-মায়ের দেওয়া টাকা বাঁচিয়ে দুঃস্থদের মুখে হাসি ফুটিয়েই যারা নিজেদের পরিতৃপ্তি খুঁজে পান।
আজ এমন স্বপ্নবাজ তরুণদের গল্প শোনাবে নয়া শতাব্দী। নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন, ‘সাত কলেজ ব্লাড অরগানাইজেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী এ কে এম শাকিল।
স্বপ্নবাজ তরুণ এ কে এম শাকিল বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা আমার স্বপ্ন। আমি চাই সমাজকে নতুন কিছু উপহার দিতে। আমাদের দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের তরুণরা স্বেচ্ছাসেবী কাজে এগিয়ে আসছে। তরুণরাই পারে সমাজকে বদলে দিতে।’
নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে শাকিল বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে বাঙলা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম চারপাশে সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো তেমন সক্রিয় নয়। চারপাশে অনেক হাসপাতাল, প্রতিদিন কলেজ ক্যাম্পাসে মুমূর্ষু রোগীর পরিবার এসে রক্তের জন্য ছোটাছুটি করতো, কখনো জোগাড় হতো কখনো আত্মচিৎকার করে আবার অন্যদিকে ছোটাছুটি করা লাগতো। এখান থেকেই চিন্তা করলাম এই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের জন্য কিছু করার। কলেজে কোন ব্লাড প্লাটফর্ম না থাকায় এমন সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়েছে ক্যাম্পাসের কয়েকজনকে। বিষয়টা এড়িয়ে না গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম।’
শাকিল আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে সরকারি বাঙলা কলেজের নাম দিয়ে একটা ব্লাড প্লাটফর্ম চালু করলাম, ‘বাঙলা কলেজ ব্লাড ব্যাংক’ নামে। কিন্তু রাজনৈতিক কিছু সমস্যার কারণে নামটি পরিবর্তন করতে হলো। পরবর্তীতে সাত কলেজের নামে ব্লাড প্লাটফর্ম চালু করলাম ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর। বর্তমান প্লাটফর্মটি একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে রূপ নিয়েছে।’
তিনি জানান, অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সাত কলেজের সেচ্ছায় সেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘সাত কলেজ ব্লাড অরগানাইজেশ’ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করলাম। আমাদের সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অনেক স্থান বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। তাছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও আমাদের সংগঠনের উপস্থিতি থাকে। তন্মধ্যে, মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ, অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা, ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষাদান, বয়স্কদের শিক্ষাদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ক্যাম্পেইন এবং শীত বস্ত্র বিতরণ উল্লেখযোগ্য।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ স্বপ্নবাজ তরুণ বলেন, ‘কীভাবে মানুষের জন্য কাজ করব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো, স্কুলগামী নয় এমন শিশুদের স্কুলগামী করবো, তাদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখি। শীতকালীন সময়ে অসহায়দের পাশে শীতবস্ত্র বিতরণ করবো। খবরের কাগজ খুললেই চোখে পরে অনেক স্থানে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। অনেক শিশু ও তরুণী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এসব বন্ধের জন্য মানুষকে সচেতন করার স্বপ্ন দেখি। আমার বিশ্বাস সমাজের তরুণরা এগিয়ে আসলে এসব বন্ধ করা সম্ভব হবে। এভাবেই একদিন সফলতা আসবে এবং গড়ে উঠবে সুন্দর আগামী। আমাদের সাথে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করতে চাইলে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি ৭ কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে।’
বাঙলা কলেজের এ শিক্ষার্থী জানান, গরীব, অসহায়, পথশিশু ও অভুক্তদের কথা ভেবে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটাকে রুটি দিবস হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং- সংগঠনের প্যাডে ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশের হয়ে প্রথম রুটি দিবস বাস্তবায়ন ও পালনের লক্ষ্যে গত বছর ১৭ নভেম্বর সংগঠনটি ৫০০ অভুক্তের মাঝে রুটি ও গোস্তো বিতরণ করেছে। এ বছরও ২য় বারের মতো রুটি দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছে। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে একদিন না একদিন এদেশে রুটি দিবস বাস্তবায়ন হবে।
সংগঠনে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জানান, সংগঠনটি এখন পর্যন্ত জনসেবা মূলক কাজে ব্যয় হয়েছে চিকিৎসা খাতে প্রায় ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা, শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৮০৫ টাকা, পথশিশুদের খাবার বাবদ ১৮ হাজার ১৫৭ টাকা, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাবদ ১০ হাজার, ঈদ সামগ্রী ২১ হাজার ৯৮০ টাকা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ