ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘মুক্ত গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক’

প্রকাশনার সময়: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৫০ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৫৬
ছায়া সংসদের বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান

সার্বিকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ মুক্ত গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো মানসম্মত অনুষ্ঠান ও সংবাদ পরিবেশনে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ক্লিনফিড প্রচার ও পে-চ্যানেল এই প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করবে। সার্বিকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ মুক্ত গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক। তাই কল্যাণমুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে গণতন্ত্র চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ক্লিনফিড প্রচারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মান উন্নয়ন নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেস’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘২০০৬ সালে ক্লিনফিড প্রচার সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হলেও দীর্ঘদিন এই আইন কার্যকর না হওয়ায় দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষিত বিবেচনায় সরকার ক্লিনফিড প্রচার সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয়। ক্লিনফিড প্রচারের পাশাপাশি পে-চ্যানেল ব্যবস্থা শুরু হলে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। একইসাথে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কলাকৌশলীদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। এক্ষেত্রে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল করার প্রক্রিয়াকে গুরুত্বসহ দেখতে হবে। তাই ক্যাবল সেটআপ বক্স আমদানিতে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও শুল্ক রেয়াত দেয়া প্রয়োজন। তবে পে চ্যানেলের কি প্রক্রিয়ায় চলবে সেই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শক্রমে ঠিক করা উচিত।’

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে অনুমোদিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সংখ্যা ৪৫ টি। এর মধ্যে সম্প্রচার চলমান রয়েছে ৩৫ টি। দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা বাড়লেও বিজ্ঞাপনের বাজার প্রসারিত না হয়ে আরো সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে। এর প্রধান কারণ হলো পে-চ্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তিত না হওয়া, সীমিত বিজ্ঞাপন বাজার, গুগল, ইউটিউব, ফেসুবক, ইমো, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসআপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব এবং একই সাথে ভারতীয় টেলিভিশনগুলোর তীব্র আধিপতা। একথা স্বীকার করতেই হবে যে, নারী দর্শকদের বৃহৎ একটা অংশ আজ জি বাংলা, স্টার জলসা, ভারতীয় বাংলা ইটিভি, হিন্দি জিটিভি, স্টার প্লাসসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতি অতিমাত্রায় আসক্ত। আর এ সুযোগে আইন থাকার পরেও বিদেশী চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপনের বড় একটা অংশ প্রচার করা হতো। গত ১লা অক্টোবর থেকে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিদেশী চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেশের বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য একটা স্বস্তির পথ তৈরি করেছে। তারপরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের একটা অংশ চলে যাওয়াতে গণমাধ্যমের অর্থ উপার্জনের পথ দিনেদিনে সংকুচিত হচ্ছে এছাড়া নিয়ন্ত্রণহীন ওটিটি প্ল্যাটফর্মও বিজ্ঞাপন বাজার সংকুচিত করার জন্য দায়ী। ফলে আর্থিক টানাপোড়নে ভালো ভিউয়ের জন্য ভালো কনটেন্ট দর্শকদের উপহার দিতে বেগ পেতে হচ্ছে দেশের টেলিভিশনগুলোকে। অন্যদিকে যদি ধরে নেওয়া হয় সারাদেশে এখন কেবল সংযোগের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এই আড়াই কোটি গ্রাহক প্রতিমাসে কেবল সংযোগদাতাকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে প্রদান করে থাকে। সেই হিসেবে কেবল অপারেটররা মাসে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০ কোটি টাকা দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়ার কথা। কিন্তু এই আয়ের কোন অংশই পান না টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। পে-চ্যানেল সিস্টেম চালু না হওয়ার কারণেই বেসরকারি টেলিভিশন মালিকরা এই ন্যায্য উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাদের কনটেন্ট দিয়ে ক্যাবল অপরেটররা অর্থ উপার্জন করছে তাদেরকে উপার্জনের একটা অংশ পাওয়ার অধিকার টেলিভিশন মালিকদের রয়েছে।’

এসময় দেশের বেসরকারি টেলিভিশন শিল্পকে রক্ষার্থে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন-

১. পে-চ্যানেল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। ২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু, ভাইবার, টুইটারে বিজ্ঞাপন প্রচারে নিয়ন্ত্রণ আনা। ৩. অন্যান্য শিল্পের মতো টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনায় স্থায়ী জমি বরাদ্দ দেওয়া। ৪. স্বচ্ছ টিআরপি জরিপ নিশ্চিত করা। ৫. সহজ পন্থায় স্বল্পসুদে বা বিনা সুদে ঋণ প্রদান করা। ৬. করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পরবর্তী দুই বছর ভ্যাট-ট্যাক্স রেয়াত দেওয়া। ৭. প্রতিবছর ৫০-১০০ টি সিনেমা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হয় সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৮. প্রিন্ট মিডিয়ার মতো সরকারি বিজ্ঞাপন বা প্রচার প্রচারণায় সরকারের বিল প্রদান করা।

প্রতিযোগিতায় সিটি ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মিল্টন আনোয়ার, সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা ও সাংবাদিক তানভীর তারেক।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ