ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুই যুগ পূর্তিতে ‘বাঁধন’ 

প্রকাশনার সময়: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ২৩:৪৮ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৩

‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’, এই শ্লোগানকে ধারণ করে মহৎপ্রাণ একঝাঁক তরুণের হাত ধরে ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৭ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন এর পথ চলা শুরু। সেই হিসাবে গত ২৪ অক্টোবর ছিল বাঁধনের দুই যুগ পূর্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কেক কাটার মধ্য দিয়ে বাঁধনের দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন।

অগ্রযাত্রার দুই যুগ পূর্তিতে কেককাটা, আনন্দ শোভাযাত্রা, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনে বাঁধনকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি।

একজন মুমূর্ষু ও মৃত্যু পথযাত্রীর বেঁচে থাকার স্বপ্ন লালন করার প্রয়াসে এগিয়ে আসছে নির্ভীক তারুণ্যের প্রতীক বাঁধনকর্মীরা, যারা উপলব্ধি করতে পেরেছে ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। বাঁধন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত অঞ্চল, দল, মত, ধর্ম ও বর্ণ নিরপেক্ষ, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।

স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, অন্যান্য সেবা ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সংগঠনটির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বাঁধনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সারা দেশে ৫৩ জেলায় ৭৫ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১২ টি জোন, ১৩৯ টি ইউনিট এবং ০৩ টি পরিবারে বাঁধনের কার্যক্রম বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি ২০২০ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে ৮,৬৯,৮৯৩ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ এবং ১৮,২৪,৫৫১ জন মানুষকে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ সংকটে ২০২০ সালেই রক্ত সরবরাহের পরিমান ছিল ৪৪,১৬৬ ব্যাগ।

রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রক্তপরিসঞ্চালন প্রক্রিয়ার জন্য বাঁধনের রয়েছে নিজস্ব রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র ‘বাঁধন ট্রান্সফিউশন সেন্টার’। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এক্সটেনশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় বরাদ্দকৃত জায়গায় নির্মিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ‘বাঁধন ট্রান্সফিউশন সেন্টার’ এর শুভ উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

শুধুমাত্র রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ বা রক্তদান করার মধ্যেই বাঁধনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রান, পুনর্বাসন, অন্যান্য সেবা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সংগঠনটি।

বৈশ্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাঁধনের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত ও বিতরণসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরাসরি এবং সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রুগীদের জন্য ছিল অক্সিজেন সেবা। আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা সেবা দেওয়ার জন্য সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসি’র সঙ্গে ৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৪টি সংগঠন মিলে গঠিত ‘প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার’ এ সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল বাঁধনের।

এ উদ্যোগে বাঁধনের পাশাপাশি যারা সহযোগী ছিলেন তারা হলেন- শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউট, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), গাজী গ্রুপ, সবাই মিলে সবার ঢাকা ও ওলওয়েল ডটকম। করোনাজয়ীদের তথ্য সংগ্রহ, ডাটা বেইজ তৈরি, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করার উদ্দেশ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘মহৎ কাজে প্লাজমা দান, এগিয়ে আসুন বাঁচবে প্রাণ’।

প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল। যেখানে প্রতিদিন বাঁধনের ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছেন, তারাই এটি পরিচালনা করছেন। আর প্লাজমা যোদ্ধাদের প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়েছে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে। অসংখ্য করোনা আক্রান্ত রোগীকে প্লাজমা সংগ্রহ করে দিয়েছে ‘প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার’।

এছাড়া বিভিন্ন জেলায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, হতদরিদ্র ও দিনমজুরদের ইফতার ও সেহরী সামগ্রী বিতরণ, পথশিশু ও অস্বচ্ছলদের ঈদ উপহার প্রদান, বন্যার্ত অসহায় মানুষের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ বাঁধনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।

বাঁধন স্বপ্ন দেখে সেদিনের, যেদিন দেশের প্রতিটি মানুষ তার নিজ রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে। রক্তস্নাত এই বাংলায় রক্তের অভাবে আর একটি জীবন প্রদীপও যেন নিভে না যায় সেজন্য বাঁধন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ