যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, ক্যাম্পাসে শালীনতা রক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে নিরাপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাত ৯টার পর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অশালীন ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ভিসি বাংলো রোড সহ বিভিন্ন অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানগুলোতে গাড়িতে করে অভিযান পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
জানা যায়, সম্প্রতি ক্যাম্পাসে এসকল কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সূত্র ধরে গত কয়েকদিন যাবৎ রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে অভিযান পরিচালনা করছেন প্রক্টর। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করছেন তিনি। পাশাপাশি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানগুলোতে কোনো ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থী যুগল একসাথে না থাকে সে বিষয়েও সতর্ক করছেন।
এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আমাদের সবার জন্য একটি জ্ঞানচর্চার স্থান। এটি আমাদের শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্র। ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুন্দর ও সুষ্ঠু রাখার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নয় বরং আমাদের সবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য প্রক্টর স্যারের টহল একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি শুধু অশালীন কার্যকলাপ রোধ করতেই সহায়তা করে না বরং আমাদের সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আমি মনে করি, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। যা ক্যাম্পাসের সুনাম ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির খন্দকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক মনোভাব গঠনে ভূমিকা রাখা। প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এমন হওয়া উচিত যা শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকে নৈতিকভাবে উন্নত করতে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যলয় পড়াশোনার জায়গা, সংস্কৃতি চর্চার জায়গা। এইখানে অশ্লীল কর্মকান্ড পড়াশোনার সার্বিক পরিবেশ নষ্ট সহ শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আপনি ভবিষ্যতে আপনার কর্মক্ষেত্রে নৈতিক থাকবেন নাকি অনৈতিকতার পরিচয় দিবেন তার সুপ্ত বীজ বপন হয় আপনার শিক্ষাজীবনে। কিছু শিক্ষার্থীর অশ্লীলতার অন্য শিক্ষার্থীদের মনেও অনৈতিকার সুত্রপাত ঘটতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সামগ্রিক সুন্দর পরিবেশ রক্ষার্থে প্রক্টর স্যারের অভিযান সাধুবাদ পাবার যোগ্য। যদি কিছু শিক্ষার্থী অসামাজিক বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে প্রশাসনের দায়িত্ব এসব বিষয় সঠিকভাবে তদন্ত করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেনো কোনো ভাবেই হয়রানির মুখোমুখি না হয়, তারা যেনো স্বাধীনভাবে স্বাছ্যন্দে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে পারে।
গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ বুলবুল বলেন, বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতিতে যে এই ধরনের আচরণের/ কালচারের সাথে পরিচিত হচ্ছে তা আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক। আমাদের অবিভাবকরা যেমন বাবা মাকে মুক্তভাবে ক্যাম্পাসে চলাচল বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। ক্যাম্পাসটি যেমন মাদ্রাসাও নয় তেমনি এটি অসামাজিক কার্যকলাপের স্থানও নয়। এখানে ছাত্রছাত্রীরা একটি শালীন সহবস্থানের মাধ্যমে শিক্ষা, গবেষণা ও এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটি করবে। আশা করি যবিপ্রবি প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে যবিপ্রবির প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমারা এ অভিযান পরিচালনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি একটি মুক্ত চিন্তার স্থান, যেখানে সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন ঘটনার যেন না ঘটে সেজন্য আমরা রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতেও এই ধরণের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা আমাদের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা চাই।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ