ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

ভুলে বাদ পড়া ৩ শিক্ষার্থীকে ভর্তি নিলো বাকৃবি

প্রকাশনার সময়: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৫১

কৃষি গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিন শিক্ষার্থী। নিজেদের ভুলে ভর্তির কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা না দিয়ে বাসায় চলে যান বাকৃবিতে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষার্থীরা। পরে বিষয়টি বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলামের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে কিছুদিন সময় নেয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ভর্তির বিষয়টি জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

এর আগে সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মানবিক দিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ওই তিন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হয়ে ক্লাস করার অনুমতি দেয়।

জানা যায়, ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থীর নাম মোছা. শিলা আক্তার শম্পা, রুবায়েত শারমিন আফিফা ও নওশীন তাসনিম শশী। তারা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বাকৃবিতে ভর্তির সুযোগ পান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোছা. শিলা আক্তার শম্পা বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বাকৃবিতে ভর্তি হতে এসেছিলাম। আসার পর ভর্তি কার্যক্রমের মেডিকেল চেকআপ, হল প্রভোস্টের স্বাক্ষর, ডিন স্যারের স্বাক্ষর নিয়েছিলাম। সবকিছু সম্পন্ন করার পর ডিন অফিস থেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। পরে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর না নিয়ে এবং কাগজপত্র জমা না দিয়েই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বাসায় চলে আসি। আমার উচিত ছিল কাগজপত্র জমা দিয়ে পরে ব্যাংক একাউন্ট খোলা। কিন্তু ব্যাংক একাউন্ট খোলার পরে আমাকে একজন বলেছিলো যে তোমার কাজ শেষ চলে যাও। তাই চলে এসেছিলাম।

পরবর্তীতে ওয়েবসাইটে মাইগ্রেশনে সবার বিষয় পরিবর্তন হয় কিন্তু আমার হয় না। আমি মনেকরি যে হয়তো কারিগরি ভুল। তাই কৃষিগুচ্ছের নিয়ন্ত্রণকারী হেল্পলাইনে মেইল করি। তারা দুইদিন পরে মেইলের উত্তরে জানায় যে আমি অনুপস্থিত। তারপর বাকৃবিতে এসে প্রথমে প্রক্টর অফিসে যাই, ওখান থেকে রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠায়। সেখানে কথা বললে তারা জানান ভর্তি শেষ হয়েছে, আর কিছু করার নেই। ওখান থেকে ডিন অফিসে আসি। পরে ডিন অফিসে আমাদের ফ্যাকাল্টির হুমাইদা ভাইয়া, সাদাত ভাইয়াসহ কয়েকটা ভাইয়া বসে ছিল। আমরা চলে যাবো এমন সময় তারা বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের নিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে যান, সেখানে তারা বলে যে দেখবে। পরে তারা উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করালে বলেন যে বিষয়টি তিনি দেখবেন।

তিনি বলেন, আমরা ২৯ ডিসেম্বর আবার আসি, আসার পরে ওখানে একটা সভা ডাকা হয়েছিল। তখন বাকৃবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শফিক ভাই অনেক সাহায্য করেন। তিনি আমাকে নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেন এবং কৃষি গুচ্ছ নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে সাহায্য করেন। পরে উপাচার্য স্যার আমার ফর্মের ছবি তুলে সিভাসু উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে মানবিক বিবেচনায় আমাকে ভর্তির সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেহেতু আমি সেকেন্ড টাইমার ছিলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি ক্যান্সেল করে আসছি। এখানে ভর্তি বাতিল হলে পড়াশোনার সুযোগই থাকতো না। শফিক ভাইয়ের জন্যে ওই পর্যন্ত গেছি ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থী সেকেন্ড টাইমার এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি বাতিল করে এসেছে। যখন জানলাম অল্প ভুলের জন্য তাদের ক্যারিয়ারটা নষ্ট হতে চলেছে। তখন আমি চিন্তা করলাম যে তাহলে কি করা যায়। পরের দিন উপাচার্য স্যারের কাছে গিয়ে যথেষ্ট অনুরোধ করলাম। তাদের অভিভাবকরাও আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে চেষ্টা করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজটি সফলতার মুখ দেখেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা ৭৫ শতাংশ ভর্তি প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ করেছিল। কিন্তু নিজেদের একটু বোঝার ভুলের কারণে পরিপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। ফলে তাদের ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। যেহেতু তারা মেরিটে নিজের যোগ্যতা দিয়েই চান্স পেয়েছিল তাই আমরা চিন্তা করলাম যে শিক্ষার্থীদের একটু বোঝার ভুলের কারণে নিজেদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা ভর্তি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় সিভাসুর ভিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করি এবং আমাদের এড হক মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই। তারা যেহেতু মেরিটে চান্স পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সুযোগ পেয়েছিল এবং একটু বোঝার ভুলের কারণে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে তাই তাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি ও ক্লাসের সুযোগ দিয়েছি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ