ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ২ রজব ১৪৪৬

থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির রঙিন আলোকচ্ছটা, কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ

প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:০৭ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৯

সারা বিশ্বজুড়ে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হলো আতশবাজি। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে রাত ১২টার প্রথম প্রহর থেকেই আকাশ আলোয় আলোয় ভরে ওঠে। বাংলাদেশের শহরগুলিতেও এই ঐতিহ্য পালন করা হয়, বিশেষ করে ঢাকার হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, বিভাগীয় শহর, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এর বিপরীতে, এটি প্রায়শই মারাত্মক পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আতশবাজির রঙিন আলোকচ্ছটা অনেকের মনোরঞ্জন করলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শারীরিক ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ এবং প্রাণহানির ঝুঁকি। চার মাস বয়সী উমায়ের কথা মনে হলে এখনো ভয়ে শিউরে উঠি।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজি ও পটকা নিয়ে চিন্তার দিকগুলো আরও বিশ্লেষণ করলে বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক উঠে আসে।

পরিবেশ দূষণ:

আতশবাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বন্যপ্রাণির ক্ষতি:

আতশবাজির শব্দ এবং আলো বন্যপ্রাণিদের ভয় পাইয়ে দেয়। অনেক প্রাণির তাদের আবাসস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়, যা প্রায়শই প্রাণহানির কারণ হয়।

মানুষের ওপর প্রভাব:

আতশবাজির অসতর্ক ব্যবহার বেশিরভাগ সময়ে শারীরিক আঘাত বা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। কখনও কখনও জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটে। উচ্চ শব্দের আতশবাজি শিশু, বয়স্ক ও যারা মানসিক চাপে ভোগে জন্য কষ্টদায়ক ও আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: আতশবাজি ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বা আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা মূল্যবান সম্পত্তির ক্ষতি করতে পারে।

আতশবাজি ও পটকা ফোটানো বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগের সমন্বয় দরকার।

এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের চেয়েও অধিক শ্রবনশক্তি রয়েছে অনেক প্রাণির যাদের জন্য আতশবাজির শব্দ ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। বিকট শব্দে পাখিরা আতঙ্কিত হয়, আবাসহীন হয় এমনকি মারা যায়। অনেক প্রাণির এ শব্দে মানুষের মতো হার্ট অ্যাটাকও হয়। ফায়ার ক্র্যাকার নানান রাসায়নিক যেমন নাইট্রেট, লেড ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর সূক্ষ্ম কনা থাকে যা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। এই সূক্ষ কনিকা গুলো রক্তে প্রবেশ করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই পশু পাখিসহ মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনের স্বার্থে আতশবাজি ফুটানো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। এ জন্য প্রয়োজনে ফায়ার ক্র‍্যাকার বিপননে নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৭ বিধি লঙ্ঘন করে অননুমোদিতভাবে ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটালে তা বিধিমালার ১৮ বিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। উল্লিখিত আইনের ব্যত্যয় হলে বা ভঙ্গ করলে প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ