দীর্ঘদিন করোনায় বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় শিক্ষানগরী রাজশাহীর চেহারা পাল্টে গেছে। এরপর শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনদিনের এই পরীক্ষা শেষ হবে আগামীকাল বুধবার। প্রতিবছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী নগরীতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটে। এবারই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণীতি ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে লোক-সমাগম আরও বেড়ে গেছে।
ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে রাজশাহী নগরী এখন জমজমাট। পরীক্ষা চলাকালীন রাজশাহীর অর্থনীতিতে চাঙা ভাব বিরাজ করে। তবে বেড়ে গেছে জীবন-যাত্রার মান। অটো-রিকশা থেকে শুরু করে সব ধরণের পরিবহণ ব্যয়, খাবার, হোটেল ভাড়াসহ বিমানের ভাড়া দ্বিগুন হয়েছে। নগরীতে বেড়েছে যানজোট। পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে রাজশাহী নগরীতে প্রবেশ করতে ৩-৪ কিলোমিটার রাস্তায় যানজোটে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
অতিরিক্ত লোকের জন্য পরিবহণ, খাবার ও আবাসন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ফলে বেড়ে গেছে জীবন-যাত্রার মান। পরিবহণ ব্যয়, খাবার, হোটেল ভাড়া, বিমানের ভাড়াসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী পরিবার বাস, ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় এড়াতে ঢাকা থেকে বিমানযোগে রাজশাহীতে আসছেন। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষগুলো ঢাকা-রাজশাহী ফ্লাইটের ভাড়া দ্বিগুন থেকে তিনগুণ পরিমান বৃদ্ধি করেছেন।
সাধারণত ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসে। স্বাভাবিকদিনে ভাড়া লাগে ২ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন সোমবার তা বাড়িয়ে ভাড়া করা হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। একদিনের ব্যবধানে বিমানের ভাড়া তিনগুন বৃদ্ধি পায়।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকা-রাজশাহীর ফ্লাইটের ভাড়া তিনগুণেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। সোমবার সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে সকালের ফ্লাইটে রাজশাহী এসেছেন বলে জানান। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের কারণে ফ্লাইটের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
বরিশাল থেকে মেয়েকে নিয়ে রাবিতে পরীক্ষা দিতে এসেছেন সুলতানা নাসরিন নামে একজন অভিভাবক। তিনি নয়া শতাব্দীকে জানান, হোটেলে সিট না পাওয়ায় মেয়েকে নিয়ে রাজশাহীতে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন নগরীর লক্ষীপুর এলাকায়। সেখান থেকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজারে অটোরিকশায় এসেছেন প্রত্যেকে ২০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে। অন্য সময়ে এই রাস্তার ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছাতে তাদের প্রত্যেককে আরো ৫০ টাকা করে দিতে হয়েছে। অথচ অন্যসময় এই রাস্তার ভাড়া জনপ্রতি ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। নাসরিনের মতো আরও অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক অটো-ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে যানজটে পড়ি। নগরীতে প্রবেশ করতে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার রাস্তায় চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীতে সবধরনের খাবারের দাম বেড়েছে। সোমবার সোনালী মুরগির কেজি ২৪০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির দাম ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬০ টাকা এবং সব ধরনের মাছের দাম বৃদ্ধি করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে রাজশাহীতে প্রচুর মানুষ আসার সুযোগে অনেকে অটোরিকশা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। খাবারের মূল্যও বাড়ানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ