ঢাকা, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

প্রকাশনার সময়: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৫৬

বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে যেমন জ্ঞান বিতরণ করা হয়, অন্যদিকে তেমন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত বুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তার কেন্দ্রস্থল ও বলা হয়ে থাকে, সেই জ্ঞান বিকাশের উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’ নামকরণ করা হয়। বর্তমানে ২২টি বিভাগে সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাস নিজেকে সাজিয়েছে সবুজের সমারাহে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরছেন মো. ইমন আলী-

চলতি বছরের জুলাইয়ে বিপ্লবের পর এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচিত হয়েছে। বিশ্বের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেছে কিভাবে অন্যায় এর বিরুদ্ধে পুলিশে গুলির সামনে একটি ছেলে বুক টান করে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন জাতির জন্য উৎসর্গ করেছে। এরপরও আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় বার বার বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো, শ্রেণিকক্ষের অভাবে ক্লাস, পরীক্ষা পিছিয়ে নিতে হয়, প্রতেক বিভাগে শিক্ষকে সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, এরমধ্যে অনেক আছেন শিক্ষা ছুটিতে, এমতাবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষকদের পক্ষে সঠিকভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম গুলো চালাতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। সবার জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা ও যাতায়াতের জন্য বাস। ১৬ বছরেও তৈরি হয়নি জিমনেসিয়াম, টিএসসি, পূর্নাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার। ২০২৪ সালে এসেও শিক্ষার্থী অফলাইনে ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে হয়। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সমস্যার সমাধান কবে হবে?

মমিনুল ইসলাম মমিন,ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শিক্ষার অগ্রযাত্রা ও স্বপ্নেরও প্রতিফলন। এটি শুধু শিক্ষার ক্ষেত্র নয়, বরং একটি মানসিক বিকাশের কেন্দ্র, যেখানে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়ন দরকার, সঠিক সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষার আয়োজন, মানসম্পন্ন শিক্ষকের উপস্থিতি এবং গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার।

পাশাপাশি, অবকাঠামোগত উন্নয়নও অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ল্যাব, লাইব্রেরি, আবাসিক হল এবং অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন দরকার। আমরা দেখেছি, স্বাধীনতা স্মারক যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা, মেয়েদের আবাসিক সংকট কমিয়ে আনার জন্য হল স্থাপন, ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবই স্থবির হয়ে আছে। আমরা প্রত্যাশা রাখি দ্রুতই এই স্থাপনাগুলোর কাজ শেষ হবে এবং আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব।

গবেষণার জন্য আরও বেশি তহবিল, উপকরণ, এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দরকার। সহশিক্ষা কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতাসহ লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশা করছি যেখানে মানসম্মত শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার সমন্বয় থাকবে। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে।

যুথি রানী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

বুকভরা স্বপ্ন, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমি এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে জ্ঞান, বিজ্ঞান, গবেষণাকে মূল্যায়ন করা হবে। লাইব্রেরিতে অধিকতর বিশ্বমানের বইপুস্তক সংযোজন করতে হবে। আবাসন সংকট থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও মুক্ত চিন্তা সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী হয়ে গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয় নোংরা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মা বাবার পরে হচ্ছে শিক্ষক তারা আমাদের আলোর পথে নিয়ে যাবে। তারা ক্লাসের পাশাপাশি নৈতিকতা ও মূলবোধ শিখাবে।

শিক্ষকরা আমাদের প্রকৃত অভিভাবক হয়ে উঠুক এবং চিন্তাভাবনা উন্নত ও বিশ্বমানের হোক। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ভর্তি হয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে চলে গেলো কিন্ত ভালো সৎ ও নৈতিকতা সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে বের হতে পারলো না এমনটা আমি চাই না। বেরোবিতে পড়াশুনার পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার কারখানা তৈরি হবে। তাহলেই শহিদ আবু সাইদ ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

বায়জিদ শিকদার, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

ছোটবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অদম্য ইচ্ছা ছিল। পরে যখন উত্তরবঙ্গের সেরা বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যাই, তখন এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আমার চাওয়া পাওয়া বেড়ে যায়। সম্প্রতি আবু সাঈদের আত্মত্যাগ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার সর্বপ্রথম প্রত্যাশা হলো কোন ডিপার্টমেন্ট বা সেক্টরেই যেন কোন রকম বৈষম্য না থাকে, হোক সেটা রাজনীতির সেক্টর, একাডেমিক সেক্টর, কিংবা শিক্ষক নিয়োগে। কোন একক দল বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে যাতে কোনরকম ডোমিনেশন না চলে তা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো অতি দ্রুত সম্পন্ন করা এবং কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হলগুলোতে আর্থিক ও মেধার ভিত্তিতে যাতে সিট দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করা। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে যদি একাডেমিক ভবনের দিকে নজর দেওয়া যায়, শিক্ষার্থীর তুলনায় ক্লাস রুমের সংখ্যা অনেক কম, যার ফলে নিয়মিত পাঠদানে সৃষ্টি হয় ভোগান্তি। তাই আমার চাওয়া দ্রুত নতুন একাডেমিক ভবনের নির্মাণ করা হোক। তেমন বৃদ্ধি পায়নি বিভাগের সংখ্যাও। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম-পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ চালু হয়েছে কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিভাগ থাকা দরকার, যেমন নাট্যকলা, চারুকলা, আইন। বিশ্ববিদ্যালয় নানা মুখী প্রতিভা বিকাশের জায়গা কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানেও পিছিয়ে। তাই অতি দ্রুত যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগগুলো সংযোজন করা হয়।

প্রতিষ্ঠার এত বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অডিটোরিয়াম নেই, যা খুবই হতাশাজনক। তার সাথে সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জিনিস টা নগন্য তা হলো গবেষণার সুযোগ। এ দিক দিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক পিছিয়ে। শিক্ষার্থী হিসাবে আশাবাদি সমস্যাগুলো নিরসনে উপাচার্য এবং ইউজিসি নজর দিবেন এবং দুর্বার গতি এগিয়ে যাবে আমাদের ৭৫ একর।

আব্দুল্লাহ আল আসিফ আকন্দ, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ