বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়ার পরই শিক্ষাজীবনের এই সময়ে একটা বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীর নতুন ঠিকানা হয় ‘হলে’। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল ভিন্ন গল্প যা এখন ইতিহাস । ২০০৯ ও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে।
২০১১ সালেই শুরু হয় হল প্রকল্পের কাজ। চার ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে। শুরুতে এই হলের নির্মাণ ব্যয় ৩৩ কোটি টাকা ধরা হলেও কাজ শেষ করতে ৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হলটি নির্মাণের কর্তৃপক্ষ।
২০ অক্টোবর ২০২০ সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধন করা হলেও করোনা প্রভাবের কারণে ছাত্রী উঠানোর কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে পহেলা অক্টোবর থেকে রেজিষ্ট্রেশন শুরু হয়েছে।
এ নিয়ে ছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া জানতে গেলে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণার ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী সুরাইয়া পারভিন (ঝুমা) জানায়, অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলের আবেদন শুরু হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা হলে উঠতে পারবো যদিও জানিনা সিট পাবো কিনা কারণ আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। আসলে আমরা যারা এত দূর থেকে ক্যাম্পাসে জার্নি করে যাই তারা বুঝি হলের গুরুত্বটা কি,আবার যারা ঢাকার বাইরের আছে তাদের জন্য হলে থাকার সুবিধা টা আসলে বর্ননাতীত। সেক্ষেত্রে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এইযে মেসে থাকা নিয়ে এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। সব মিলিয়ে আশা করছি আমাদের বোনেরা সকল জল্পনা কল্পনা শেষ করে খুব তাড়াতাড়ি হলে থাকার সুযোগ টা পাবে। ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষকে।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের হিরা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে সকল শিক্ষার্থীই চায় নিজস্ব ক্যাম্পাসের হলে থাকার জন্য। আমি ও তার ব্যতিক্রম নই, অনেক দিনের ইচ্ছা হলে থাকার। অনেক প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলের আবেদন শুরু হয়েছে। আমি প্রথম দিনই আবেদন করেছি। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় জানি না হলে সিট পাবো কিনা , তবু ও বেশ ভালোই লাগছে জবিয়ান বোনেরা তো হলে উঠতে পারব একসাথে।
অন্যদিকে ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মারিয়া জাহান বলেন, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম ছাত্রী হল। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের থেকে শুনতাম হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আনন্দ হয়। আমরা এতো দিন এই আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি এখন আশা করি আমরা ৬০০ জন শিক্ষার্থী এক সাথে থাকবো। যেটা আমাদের সবার জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি।
যদিও আমাদের হলে আসন সংখ্যা সিমিত তবু ও আশা করি আমরা যারা এই ৬০০ জনের একজন হতে পারবো তারা অনেক লাকি হবে।আশা রাখছি, হল হবে আমাদের একটা প্রানবন্ত মিলনায়তন। যেখানে এক সাথে থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো। যখন কলেজে ছিলাম তখন কলেজের হোস্টেলে থাকতাম। তাই আমি অনেক এক্সাইটেড যে আবার অনেকে মিলে এক সাথে থাকার একটা সুযোগ করে দিচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণার ইনিস্টিউটের সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি বলেন স্বপ্নপূরনের আনন্দ কার না মনে জাগে,আর যদি সেটা হয় নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্বোধন এবং হলে সিট বন্টন নিয়ে তাহলে হয়তো এই আনন্দের মাত্রা আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়।
দীর্ঘদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উদ্বোধনকৃত আবাসিক হলের সিট বন্টন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে সকল মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক দূরে অবস্থান করেছিল এতদিন তাদের জন্য এটি সত্যিকার অর্থে আনন্দের বার্তা বহন করছে। তাই হল নিয়ে আমার ভালোলাগাটা আসলেই অনেক বেশি কাজ করছে। যদি আমি অন্যদের মত সিট পাই তাহলে আরো বেশী ভালো লাগবে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ