ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যবিপ্রবিতে অস্তিত্বহীন লিফট অপারেটর, বেতন পাচ্ছেন প্রভাষক

প্রকাশনার সময়: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৫৮

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অস্তিত্বহীন এক লিফট অপারেটরের নামে প্রায় ১৫ মাসের বেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের ব্যাংক একাউন্টে জমা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি দৃষ্টিগোচর হলে নিজস্ব একাউন্টে লিফট অপারেটরের মাসিক বেতনের টাকা আসার কারণ জানতে চেয়ে হিসাব পরিচালক ও রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ওই শিক্ষক। তবে বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তর।

জানা যায়, দীর্ঘ এক বছরেরও অধিক সময় ধরে অস্তিত্বহীন এক লিফট অপারেটরের প্রতি মাসে বেতনের টাকা ১৪ হাজার ৪ শত ৬ টাকা করে যবিপ্রবির প্রভাষক মুহাইমিনুল ইসলামের (ছদ্মনাম) অগ্রণী ব্যাংকের নিজ অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। যার মোট পরিমাণ ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৪ শত ৭২ টাকা। ওই শিক্ষক অনলাইনে নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করতে গিয়ে তার বেতনের অতিরিক্ত অর্থ দেখতে পেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও হিসাব দপ্তরকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।

রেজিস্ট্রার বরাবর অবহিত পত্রে ওই শিক্ষক লেখেন, আমার অগ্রণী ব্যাংক হিসাব নম্বর ০২০০০২***** এ আমার অজান্তে অতিরিক্ত অর্থ সংযুক্ত হয়েছে। বিষয়টি আমি, অনলাইনে ব্যাংকের হিসাব বিবরণী দেখে জানতে পারি। অতিরিক্ত অর্থ নিয়োগের পরবর্তী সময় হতে যোগ হয়ে আসছে। বিষয়টি যবিপ্রবি হিসাব রক্ষক দপ্তরে অবহিত করেছি এবং কারণ ফোনতে চেয়ে আবেদন করেছি। উপরিউক্ত বিষয়টি অবহিত করিলাম।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে একজন শিক্ষকের নাম কেনো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর খাতায় থাকবে। এতে তাকে চরমভাবে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে এবং এত মাস ধরে বেতন শিট পাস হচ্ছে সেটা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা খেয়ালই করে না।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পনেরো মাসের জমাকৃত অর্থ শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলামের (ছদ্মনাম) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো আছে, তিনি ওই টাকা উত্তোলন করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ কোনো পদে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদানপত্র হিসাব দপ্তরে পাঠালেই কেবল ওই ব্যক্তির নামে বেতন ইস্যু হয় নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নাম্বারে। যখন লিফট অপারেটরের নাম হিসাব শাখায় তালিকা বদ্ধ করা হয় তখন সবকিছু দেখেই বেতন ইস্যু করা হয়। ওই নামে কোনো অপারেটর নাই তাহলে কিভাবে একজন অপারেটরের নামে বেতন আসে? নিশ্চয় এর মধ্যে হিসাব শাখার উর্ধ্বতনের গাফিলতি বা অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর জায়গায় একজন প্রভাষকের নাম নিয়ে আসা শিক্ষক সমাজকে লাঞ্ছিত করা। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান করছি।

এবিষয়ে যবিপ্রবি শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, অনলাইন স্টেটমেন্ট চেক করতে গিয়ে দেখি অতিরিক্ত অর্থ অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ব্যাপারটি জানতে পেরে সাথে সাথেই হিসাব শাখাকে মৌখিকভাবে জানাই। পরবর্তীতে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রার ও হিসাব পরিচালককে অবহিত করি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। হিসাব শাখার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গা থেকে এমন ভুল কখনো আশা করিনি।

তিনি বলেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর জায়গায় আমার নাম যাওয়া এবং ওই অস্তিত্বহীন ব্যক্তির টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শিক্ষক হিসেবে সম্মানহানিকর বিষয়। এর জন্য যে বা যারা দায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার কারণ কম্পিউটার অপারেটরের উদাসীনতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার ডিরেক্টর মো. জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলামের বেতন প্রদানের বিষয়টা আমি জানার পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান ভুলবশত ওই শিক্ষকের নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম্বার লিফট অপারেটরের জায়গায় ডাটা এন্ট্রি করা হয়। যদি কম্পিউটার সফটওয়্যারে ডুপ্লিকেট একাউন্ট চেক করার পদ্ধতি থাকতো তবে এমন ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ থাকতো না। বিষয়টি ওই শিক্ষক অবহিত করলে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, তারা চার কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিবেন। তদনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ