ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনিয়ম, জুলুম ও দুর্নীতির বিচারে বাকৃবিতে গণতদন্ত কমিশন গঠন

প্রকাশনার সময়: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:০১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। ওই গণতদন্ত কমিশনকে বিগত সাড়ে পনেরো বছরে বাকৃবিতে সংঘঠিত সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম-নির্যাতন এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয় তদন্ত করে সুপারিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে গণতদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।

গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া এবং সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার।

গণতদন্ত কমিশনে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম মুজিবর রহমান, উপদেষ্টা হিসেবে ময়মনসিংহ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. খালেদ হোসেন টিপু মনোনীত হয়েছেন।

এ ছাড়াও কমিশনে সদস্য হিসেবে বাকৃবি ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান প্রামানিক, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জোয়াদ্দার ফারুক আহমেদ, কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম হারুন-অর রশিদ, পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, সার্জারি অ্যান্ড অবসটেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঞা, পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (জিটিআই) অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব, বাকৃবি প্রক্টর ড. মো. আব্দুল আলীম, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিনারা খাতুন, পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুনির হেসেন, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক-ই-রববানী, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান, কৃষি ও ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ জামান ভূঁইয়া, ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ইকবাল, শিক্ষা বিষয়ক শাখার এডিশনাল ররেজিস্ট্রার ড. ফারুক আহমেদ, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার এডিশনাল ডাইরেক্টর মোহাম্মদ শফিউল্যাহ, বিএসারটির এডিশনাল ডাইরেক্টর মো. ছরোয়ার হেসেন মনোনীত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে গণতদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলসমূহে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সংঘটিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র‍্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুম টর্চার, সিট বানিজ্য, চাঁদাবাজি ও সংঘঠিত হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান করে, এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে কোন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করে এই নির্যাতন ও হয়রানির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতি/পর্যায়োন্নয়নে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনসহ সকল প্রকার প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয় তদন্ত করা এবং এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও গণতদন্ত কমিশনের কার্য পরিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজসহ সকল প্রকার ক্রয়কাজে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, কমিশন গ্রহণসহ আর্থিক খাতের সকল দুর্নীতি তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং শাস্তির সুপারিশ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শান্তির সুপারিশ করা।

বিশ্ববিদ্যালের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা নেয়া এবং বাকি পরিশোধ না করাসহ তাদের ওপর সংঘঠিত সকল প্রকার জুলুম-নির্যানের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যারা নির্যাতন, হত্যা ও গণহত্যার উস্কানি ও সমর্থন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছে এবং মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিষয়ে বলা হয়েছে।

গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া এ বিষয়ে বলেন, আমরা কমিশনের কর্ম পরিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত অভিযোগ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবো। কমিটির সকলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাকৃবির সকল অনিয়ম, অপকর্ম, অপশাসন, অবক্ষয়, জুলুম ও দুর্নীতির বিচার করা হবে, যেন পরবর্তীতে কেউ এ ধরণের কাজ না করতে পারে। বিগত বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান মর্যাদা অনেক নিচে নেমে গেছে, আমরা চাই এই বিচারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানন্নোয়ন হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ