পুঁথিগত বিদ্যায় চাকরি মিলবে না বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটির হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে নয়া শতাব্দীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এসময় সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তেমরা দেখেছ আমি সহ-শিক্ষা বিষয়ে খুবই উৎসাহ দেই এবং আমি বিশ্বাস করি সহ-শিক্ষার কারণে একজন শিক্ষার্থীর আত্মমর্যাদাবোধ বেড়ে যায়। খালি পুঁথিগত বিদ্যা মুখস্থ করে কোনো দিন চাকরি পাওয়া যায় না। যারা এক্সট্রা কো-কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত আছে তারা যেকোনো জায়গায় সাহস নিয়ে কথা বলতে পারবে এবং চাকরিতে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য করতে গেলে তরতর করে উঠে যাবে।
আমি আগেও বলেছি, আমার কলেজের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নূন্যতম দুইটি কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
এসময় তিনি বলেন, বাঙলা কলেজ বাঙলা কেন 'ঙ' দিয়ে লেখা?, বাংলা লিখতে গেলে অনুস্বর (ং) থাকে কিন্তু এখানে 'ঙ' কেন?
কারণ ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছিলো বাঙলা কলেজ লিখতে গিয়ে 'ঙ' ব্যবহার করবো এজন্য যে বাঙলা কলেজ স্বাধীনভাবে চলবে। কারণ 'ঙ' একটি স্বাধীন বর্ণ। তিনি যদি ঐ সময়ে স্বাধীনভাবে চলার কথা বলে থাকেন তাহলে এত বছর পরে এসে আমরা কেন স্বাধীনভাবে চলবো না! আমরা অবশ্যই অন্যান্য কলেজ থেকে এ কলেজটিকে আলাদাভাবে তৈরি করবে। কারণ আমাদের কলেজ আন্দোলনকে সামনে রেখে নামকরণ করা হয়েছে সরকারি বাঙলা কলেজ।
আরেকটি বিষয় বলে, ১৯৬২ সালে ১ অক্টোবর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ কলেজকে সরকারি করা হয়। বেঁছে নেওয়া হয়েছে শহিদ দিবসের দিন, সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে বাংলা ভাষার ওপর কলেজটিকে কত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান বলেন, রাজনীতিবিদদের নামে, বড় বড় মহান ব্যক্তিদের নামে কিংবা স্থানের নামে কলেজের নামকরণ করা হয়। কিন্তু এই কলেজটি ভাষা আন্দোলনকে সামনে রেখে নাম করণ করা হয়েছে। ৫২'র ভাষা আন্দোলন কী নিয়ে হয়েছিলো? বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য। সে আন্দোলন যখন তারা করেছিলো তখন তারা দেখেছিলো করাচিতে একটি উর্দু কলেজ আছে। আর এখানে যদি বাংলার নাম দিয়ে কলেজ করা না হয় তাহলে কীভাবে রাষ্ট্রভাষা দাবি করতে পারি। আর ৫২ সালে মো. আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বলেছিলেন উর্দুই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। এখানে আমরাও উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চেয়েছি অতএব এজন্যই আমরা আন্দোলন করেছি এবং আমাদের স্বাধীনতার বীজ ৫২' এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এর পরে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান সরকার গঠন করলো। এর পর আইয়ুব খান আমাদের উৎখাত করলো, সবাইকে সরিয়ে দিলো আরও কত কিছু করলো। এ ভাষা আন্দোলনকে সামনে রেখে কলেজের নামকরণ এবং ভাষা আন্দোলনের সৈনিকরাই কলেজটি গড়েছে। এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলো ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং ইব্রাহিম স্যার ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি ভাষা সৈনিকরাই কলেজটি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলো। সেজন্য এ কলেজের দায়িত্ব নেওয়ার পরে একটু অন্য রকম অনুভূতি তো কাজ করেই। আর আমি যেহেতু বাংলার ছাত্রী এবং ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাংলার শিক্ষক ছিলেন আমাদের অতএত এ বাঙলা কলেজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমার অন্য রকম অনুভূতি কাজ করবেই।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ