মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

কানের পর্দা ফাটানোর প্রতিশোধ নিতে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

প্রকাশনার সময়: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮
ছবি- অভিযুক্ত এনামুল হক ইমন

চড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটানোর প্রতিশোধ নিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করেছেন শাখা ছাত্রদলের কর্মীরা।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে লালন শাহ হলের ৪১৫ নং কক্ষে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধর শেষে রোববারের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ার হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে সাময়িক উত্তেজনা বিরাজ করে।

ভুক্তভোগী সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীর নাম মিনহাজুল হক রুমন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনা শেষ হওয়ায় তিনি গত ছয় মাস আগে হল ছেড়ে দেন। খুলনায় এক কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য তিনদিন আগে থেকে ক্যাম্পাসের হলে অবস্থান করছেন। পূর্বে ক্যাম্পাসে থাকাকালীন রুমন শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী ছিলেন।

তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এনামুল হক ইমন। তিনি শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শ্রাবণ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের রোজসহ ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগীকে মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ নভেম্বর আনুমানিক রাত ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় এলাকা দিয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন অভিযুক্ত ইমন। জোরে বাইক চালানোর কারণে তখন রুমন তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ইমনের পথ আটকে তাকে চড় থাপ্পড় দেয়। এসময় ইমনের বাম কানে প্রচণ্ড আঘাতের ফলে কানের পর্দা ফেটে যায়। এ ঘটনায় রুমনের বিচার এবং কানের অপারেশনের ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বারবার লিখিত অভিযোগ দেয় ইমন। কিন্তু পরে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত উভয় পক্ষের মাঝে বিষয়টি সমাধান করে দেন।

এ ঘটনার জের ধরেই প্রতিশোধ নিতে শনিবার সন্ধ্যার পর ইমনের নেতৃত্বে শ্রাবণ ও রোজসহ ১০-১২ জন রুমনের রুমে প্রবেশ করে। এসময় তাদের মধ্যে পূর্বের ঝামেলা নিয়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে রুমনের রুমমেটদের আটকে রেখে তাকে মারধর করেন অভিযুক্তরা৷ সেই সময়ে রুমনকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয় এবং রোববারের মধ্যে হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।

এই ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুমন তার অনুসারীদেরকে নিয়ে সেই ছাত্রদল কর্মী ইমনের খোঁজে বঙ্গবন্ধু হলের ৩০৯ নম্বর কক্ষে যান। কিন্তু তাকে না পেয়ে তারা রুমের তালা ভেঙে তার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেন।

ভুক্তভোগী মিনহাজুল হক রুমন বলেন, আমি রুমেই ছিলাম। হঠাৎ ১০-১২ জন আমার রুমে আসে। তাদের মধ্যে শুধু ইমনকে চিনি। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে। একপর্যায়ে আমার এবং আমার রুমমেটদের গায়ে হাত তোলে। পরে আমাকে কালকের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়ে তারা চলে যায়।

এদিকে মারধরের বিষয় স্বীকার করে অভিযুক্ত এনামুল হক ইমন বলেন, গত দশ এগারো মাস আগে আমাকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয় রুমন ভাই। তবে সেসময় সে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় থাকায় আমি বিচার পাই নাই। ছাত্রলীগের সভাপতির রুমে আমাকে আর আমার বাবাকে ডেকে হ্যান্ডশেক করিয়ে মিটিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। এজন্য আমি বন্ধুদের নিয়ে ভাইয়ের রুমে আজ কথা বলতে গিয়েছিলাম। তারপর আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তাকে মারধর করি। আমি তখন বিচার না পেয়েই এই প্রতিশোধ নিয়েছি।

আরেক অভিযুক্ত শ্রাবণ বলেন, কয়েকমাস আগে আমার বন্ধুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে আজ আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে একপর্যায়ে মারধরের ঘটনা ঘটে। তাদের ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুন বলেন, তারা এর আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলো বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তারা আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে। শ্রাবণসহ আরো কয়েকজন আমাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আসে। কিন্তু আমরা এমন কাউকে আমাদের দলে যুক্ত করতে চাই না, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। ছাত্রদল কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপরাজনীতি প্রশ্রয় দেয় না।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ