মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ক্যালিওগ্রাফি ও গ্রাফিতিতে চুয়েট সংস্কার

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০১

আকাশে চলছে মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলা। সবুজ স্বর্গ খ্যাত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গাছপালায় কচি পাতার রঙ হয়ে উঠছে গাঢ় সবুজ। হলের কার্নিসে নতুন করে বাসা বাঁধছে চড়ুই দম্পত্তি। এদিকে টিএসসির গরম চায়ের কাঁপে চলছে তুমুল আড্ডা। বিষয়বস্তু একই ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে দেশ গঠনের অঙ্গীকারে রং তুলিতে ব্যস্ত কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ।

জুলাই বিপ্লবে টালমাটাল ছিল সারা দেশ। চেষ্টা করছে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর। ফ্যাসিজমের আত্ম অহংকারকে গুড়িয়ে দিয়ে যেন মাথা তুলে দাঁড়ানোর এক অঙ্গীকার। রং তুলিতে ছাত্র জনতা দেয়ালে দেয়ালে আঁকছে বুকের ভেতর জমে থাকা বিজয়ের গল্প, ফুঁটে উঠছে তাতে বিপ্লবী স্লোগান, নতুন বাংলাদেশ আর আবু সাইদের সাহসী বুক। চুয়েটের প্রশাসনিক ভবন কিংবা টিএসসির কলাম, ক্যালিওগ্রাফির রহস্যময় লিপি গুলো যেন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর!

প্রকৌশলীদের কাঠখোট্টা জীবনে ক্যালকুলাসের ছড়াছড়ি। হয়ত কোনো একদিন, কোনো বিকালে, প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করতে বের হবেন আপনি। অনুষদের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে আনসার চেকপোস্টে চোখ আটকে যাবে। যেখানে বড় করে লেখা-‘July Massacre’। মনে পড়বে এইত, কিছুদিন আগেই রক্তের বন্যায় ভেসেছিল এ দেশ। মন খারাপ লাগবে, এগিয়ে যাবেন আর প্রকৌশল দপ্তরের দেয়ালে চোখে পড়বে আবু সাঈদের মায়ের সেই আর্তনাদ-‘হামাক ব্যাটাকে মারলু কেনে!’। মনে হবে ফাল্গুন নয়, গত শ্রাবণেই আপনারা দ্বিগুণ হয়েছিলেন। হয়ত কখনো প্রিয়তমার সঙ্গে গল্প করতে করতে হাঁটবেন গোলচত্বরের সামনের রাস্তায়। হঠাৎ চোখ আঁটকাবে দেয়ালে সেই রক্ত গরম করা লেখায়- ‘চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ নাও; বুকের ওপর ট্যাংক চালাও!’

চুয়েটে ক্যালিওগ্রাফির কাজ এখনও চলমান। এতে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইতমাম ওবায়েদ সামিন বলেন, বর্তমানে চুয়েটে এক ধরনের সংস্কার চলছে। প্রতিবছর এডমিশন সহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে চুয়েটে মানুষ আসে। আমরা চুয়েটকে নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। সৌন্দর্য বাড়াতে চাই। তাছাড়া বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, দেয়ালে-দেয়ালে ক্যালিওগ্রাফি কিংবা গ্রাফিতি অঙ্কন চলছে। সেই ধারাও চুয়েটে বজায় রাখার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র গ্রাফিতি কিংবা ক্যালিওগ্রাফিতে চুয়েট শিক্ষার্থীরা সীমাবদ্ধ ছিলেন না, দেশ গড়ার দায়িত্বও তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সরকার পতনের পর দেশ গড়ার কাজে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং, পরিচ্ছনতায়ও তারা অংশ নিয়েছেন, নিচ্ছেন।

যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা খালিদ বিন শামস বলেন, এখন সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে সাজাবার। আমাদের দেশে সংস্কার চলছে। সে সংস্কারের ছোঁয়া চুয়েটেও দিতে চাই। টিএসসির কলামগুলিতে করা ক্যালিওগ্রাফি আর ক্যাম্পাসজুড়ে করা গ্রাফিতি আমাদের জুলাই বিপ্লবকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কত শত মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমাদের এই বিপ্লব।

পুরকৌশল বিভাগের একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব নাবিল বলেন, দেয়ালগুলো ছিল জীর্ণ। এগুলোতে ক্যালিওগ্রাফি করায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছে এখন। এ ছাড়া গ্রাফিতিগুলো আমাদের বিজয়ের গল্প তুলে ধরছে।

এদেশের ছাত্র জনতা কখনোই জুলাই বিপ্লবকে ভুলবে না। তাদের মস্তিষ্ক ভুলতে দিবে না। জুলাই নতুন করে বাঁচতে শেখায়, নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলে। এদেশের বুকে যখনই দুঃশাসন নেমে আসবে, জুলাই হবে অনুপ্রেরণা। জুলাই হবে বিপ্লবের কণ্ঠস্বর।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ