মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

বন্যাদুর্গতদের পাশে চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০

সম্প্রতি ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে ভেসেছে দেশের ১১টি জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল কয়েক লাখ মানুষ। বন্যার পানি ক্রমশ কমে গেলেও রেখে গেছে ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন। এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সারা দেশের মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও।

বন্যা শুরুর প্রথম দিকে মানুষ যখন বাস্তুহারা হয়ে বন্যা মোকাবিলায় প্রাণ নিয়ে কোনোভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল তখন প্রথম ধাপে প্রায় তিন লাখ টাকার তহবিল সংগ্রহ করে ৪৫০ এর অধিক বন্যাদুর্গত পরিবারকে শুকনা খাবার বিতরণ করেছে শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপে বন্যায় কবলিতদের পুনরায় ভারী খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আর্থিক তহবিল সংগ্রহ করছে চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

অর্থনীতি বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্রথম ধাপে আর্থিক তহবিল সংগ্রহ শুরু হয় ২২ আগস্ট থেকে। বিভাগের শিক্ষক, সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৩ টাকা সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে অনুদান দিয়ে দুর্গম এলাকার বর্ন্যার্ত পরিবারের কাছে ত্রাণ যেমন- মুড়ি, চিড়া, গুড়, পানি, মোমবাতি, লাইটার, বিস্কুট, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ফিটকিরি ক্রয় করে তা পৌঁছে দেওয়া হয়। গত ২৬ আগস্ট ভোররাতে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নোয়াখালীর উদ্দেশ্য রওনা হয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি দল। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার হিজলী, ফতেহপুর, নিজ সেনবাগ, অর্জুনতলা, শাহাপুর,অষ্টদ্রোহ গ্রামের প্রায় ৪৫০ এর অধিক পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করে শিক্ষাথীরা।

বন্যা পানি ক্রমশ কমে যাওয়ার দ্বিতীয় ধাপে বন্যার্তদের ভারী খাবার পৌঁছানোর লক্ষ্যে পুনরায় তহবিল সংগ্রহ করছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ধাপে বন্যা কবলিতদের চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, লবন, খাবার পানি সরবরাহ করবে তারা।

দুই ধাপে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ায়ে প্রশংসনীয় কাজ করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিকে বন্যা কবলিতরা বাস্তুহারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিল। তখন তাদের প্রথম প্রয়োজন ছিলো উদ্ধার হওয়া এবং শুকনা খাবারের। শিক্ষার্থীরা প্রথম ধাপে বন্যার্তদের শুকনা খাবার পৌঁছে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি আরও করুন। এখন বন্যায় ক্ষতের চিত্র ফুটে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে চাল, ডাল, কাপড় ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তাই বেশি। এক্ষেত্রে আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা সঠিক উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বাপ্পি বলেন, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য আমাদের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই এগিয়ে আসার চেষ্টা করি। এজন্য আমরা ফান্ড সংগ্রহ করা শুরু করি। শুরু থেকেই আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো, যেখানে সরারচর ত্রাণ বা সহায়তা পৌঁছায়না। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করি এবং প্রথম ধাপে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোর প্রায় ৪৫০ এর অধিক পরিবাবারের কাছে শুকনো খাবার সামগ্রী পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। এখন যেহেতু অনেক অঞ্চলে পানি নেমে গেছে তাই আমরা দ্বিতীয় ধাপে বন্যাদুর্গতের নিকট ভারী খাবার যেমন - চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি পৌঁছে দেয়া লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইসমাইল হোসেন বলেন, একজন শিক্ষার্থী, নাগরিক হিসেবে দেশের এই ক্রান্তিকালে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজনবোধ থেকেই অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আর্থিক তহবিল সংগ্রহ করি। আমাদের বিভাগের বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে ভালো সাড়া পেয়ে প্রথম ধাপে প্রায় ৪৫০ টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার দিতে সক্ষম হই। দ্বিতীয় ধাপে আমরা পুনরায় ত্রাণ বিতরণের জন্য আমরা ফান্ড কালেকশন শুরু করেছি। অর্থনীতি পরিবারসহ সকলের আমাদের এই কার্যক্রমকে সফল করতে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রত্যাশা করছি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ