বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ১১টি জেলার অবস্থা খুবই নাজুক। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বানভাসি মানুষের সহায়তায় অনেকগুলো সংগঠন এগিয়ে আসলেও ওইসব এলাকার গবাদিপশুর কিংবা প্রাণি সম্পদের জন্য আলাদাভাবে সরকার বা সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রাণি খাদ্য বা প্রাণি চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল।
প্রাণিসম্পদ সেক্টরের অন্যতম ধারক এবং প্রাণিদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি থাকায় বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রাণি সেবার ব্রত নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের ৫ জনের একটি টিম ৩ টন প্রাণি খাদ্য এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ঔষুধ নিয়ে ফেনীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ওই টিমটি ২৯ ও ৩০ আগষ্ট সারাদিন ফেনীর ৩টা উপজেলায় (পশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া) প্রায় ৯০০ খামারিদের মাঝে প্রাণি খাদ্য, গবাদিপশুর প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষুধ দেন। এছাড়া কয়েকটি খামার পরিদর্শন ও বিভিন্ন টেকনিক্যাল পরামর্শ দেন।
এসময় বাকৃবির টিমটিকে সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিতে সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.কে.এম. হুমায়ুন কবির স্যার, ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক স্যার এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আরেকটি টিম বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রায় ২.৫ টন ও লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে ৫১০ কেজি গো-খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ঔষুধ নিয়ে পৌঁছে গেছে।
এই বিষয়ে বাকৃবি পশুপালন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসান মুবিন বলেন, প্রাণিসম্পদ সেক্টরের একটি স্টেকহোল্ডার হিসেবে বন্যা দুর্গত এলাকায় খামারিদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। আশাকরি দেশের প্রাণি সম্পদের এই বিপদে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য কে আবারও পুনঃস্থাপিত করা সম্ভব হবে। আমরা বন্যার্তদের শেষ সম্বল রক্ষার জন্য ভালো কিছু করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ডা. মো. উমর ফারুক বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে প্রাণিদের রক্ষার্থে অতীব প্রয়োজনীয় ফিড, মেডিসিন এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিনিয়র ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু ফিড এবং মেডিসিনের অনুদান পেয়েছি। যা বন্যা দুর্গত এলাকাসমূহের উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ওই এলাকায় প্রয়োজন মাফিক ফিড, মেডিসিন এবং টেকনিক্যাল সেবা প্রদান করেছি। এ ছাড়াও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্বলহীন খামারিদের মাঝে হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু বিতরণসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলমান রয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ