ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেমন উপাচার্য চায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ?

প্রকাশনার সময়: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৪৩

সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক নূরুল আলম। এতে শূন্য হয়ে পড়েছে প্রশাসনের শীর্ষ এই পদটি। এরমধ্যে নতুন উপাচার্য পদে আলোচনায় রয়েছেন একাধিক শিক্ষক। তবে কেমন উপাচার্য চাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকটের ১৬ ধারা অনুযায়ী সিনেটের সচিব রেজিস্ট্রার। এ ছাড়া উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বিধি অনুসারে তিনি (রেজিস্ট্রার/সচিব) প্যানেল নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। মনোনয়ন/নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করার দায়িত্বও তার। তবে রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করায় বর্তমানে এই পদে স্থায়ী/ভারপ্রাপ্ত/চুক্তিভিত্তিক কেউ নেই। ফলে রেজিস্ট্রার না থাকায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের সুযোগ নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্যানেল নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই এ পদে নিয়োগ দিবেন বলে জানা গেছে। তবে এ তালিকায় প্রাধান্য পাবে শিক্ষার্থীদের পছন্দ। অন্যথায় ফের আন্দোলনের আভাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আলোচনায় থাকা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন রুনু, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন আব্দুর রব। তাদের মধ্যে সোহেল আহমেদ আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া গোলাম রব্বানী ব্যতীত বাকিরা বিএনপিপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

এ ছাড়াও তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষকের নামও রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তবে অবসরপ্রাপ্তদের উপাচার্য হিসেবে চান না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

এ নিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন একজন ভিসি চাই যিনি হবেন সৎ, শিক্ষার্থীবান্ধব এবং একইসাথে প্রশাসন চালাতে দক্ষ। বর্তমান প্রশাসনিক অচলাবস্থায় এমন ভিসি জরুরি যিনি এই শৃঙ্খলাসংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন। অন্যদিকে কোন রাজনৈতিক দল বা মতের প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্যপ্রবণ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন অরাজকতাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পারবে না এমন ভিসিকে আমরা চাই না।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, এতদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালিয়েছে পুরনো ধ্যান-ধারণার মানুষ, যারা আবার প্রত্যক্ষভাবে ফ্যাসিস্টের গোলাম ছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তার কিছুই বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান সময়ে এসে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যুগের চাহিদা বুঝে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালাতে পারবে এরকম একজন ডায়নামিক ভিসি নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরিন জলি বলেন, 'ভিসি হিসেবে এমন একজন ব্যক্তি প্রয়োজন যিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লালন করেন বা যদি কোনো দল করেই থাকেন সেই দলের অন্ধ সাপোর্টার নয়, আবার পূর্বে বিরোধী দলের সাথে মিলে নিজের স্বার্থ হাসিল করা কোন দালালও নয়। ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি প্রতিষ্ঠান থেকে বিলুপ্ত করবেন এবং পূর্বে কোনো তেলবাজ, চাটুকার, বামপন্থী, ডানপন্থী পরিচয় থাকবে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষক চাই যিনি সকল প্রকার ধর্মীয় বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নিবেন এবং চাটুকার শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, ছাত্র পাশে রাখবেন না।'

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবেন এমন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং এ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন কেউ উপাচার্যের দায়িত্বে আসুক।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ