সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করে হল দখল মিশনে নেমেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গত ১০ আগস্ট থেকে প্রতি রাত নিয়ম করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেশ ধরে আবাসিক হলগুলোতে বিভিন্ন মিটিংয়ের আয়োজন করছেন তারা।

সরকার পতনের আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা হলের সিট নিয়ে নতুন প্যারামিটার তৈরি করে হলে নতুন করে শিক্ষার্থী উঠানো হবে বলে দাবি উত্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্যারামিটার নির্ধারণ করা হবে জানান তারা। কিন্তু এসব নতুন নিয়ম-নীতির আদলে পূর্বে যারা হলে ছিল; সিনিয়র ভাইদের র্যাগিং ও বুলিংয়ের শিকার এবং গণরুমে থেকে একটি হল সিট অর্জন করেছে, এরকম নানা অজুহাতের বেশে মানবিক দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হল আঁকড়ে থাকতে চাচ্ছেন ছাত্রলীগকর্মীরা।

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মিটিংয়ে তাদের গৃহীত সিদ্বান্তগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন; এবং এসব পোস্টে তাদের গৃহীত সিদ্বান্তগুলোর পক্ষে ছাত্রলীগকর্মীদের দ্বারা কমেন্ট করিয়ে যৌক্তিক দাবি বলে জনমনের সহানুভূতি কেড়ে নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

আবাসিক হল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে উঠতে শুরু করে আন্দোলনে নীরব থাকা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী। তখন থেকে এসব ছাত্রলীগকর্মী হলে সংঘবদ্ধ হয়ে সিট আঁকড়ে ধরা নিয়ে নিয়মিতই আলোচনা ও পরামর্শ সভা করে যাচ্ছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক এ ব্যাপারে বেখবর বলে জানা যায়। তাদের সাথে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই ছাত্রলীগকর্মীরা এসব সভার আয়োজন করছেন বলে অভিযোগ সমন্বয়কদের।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, সমন্বয়কদের নির্দেশনা ছিল, যারা আগে হলে ছিল তাদেরকে হলের সিট বণ্টন বিষয়ে নতুন নিয়ম তৈরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকতে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু শিক্ষার্থী এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হলের সিট দখল নিয়ে মিটিং করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগকর্মী। যেহেতু এসব হল মিটিং বিষয়ে সমন্বয়কদের কোনো নির্দেশনা নাই, সেহেতু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছি, তারা সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানের নির্দেশে এসব করছে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হলের অভ্যন্তরীণ সভা করার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই কাজগুলো যারা করছে আমরা মনে করছি আন্দোলনের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ তারা এই কাজগুলো আমাদের অবগত করে করছে না।

তিনি বলেন, যারা আগে হলে দখলদারিত্বের রাজ্য কায়েম করে গেছেন, আমরা মনেকরি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং তাদের উত্তরসূরী হয়ে তারা এসব কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে।

গালিব আরও বলেন, এরমধ্যে আমরা হলে তুলার ব্যাপারে কিছু ক্রাইটেরিয়ার কথা প্রস্থাবনা করেছি। হলের সিট বণ্টন বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভা করেছি। আগামীকালও করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর