নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. জসীম উদ্দিনের অব্যাখ্যায়িত আয় ২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৩ টাকা। গত দুই কর অর্থবছরে মোট ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৩ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া যায়। তার এ অব্যাখ্যায়িত টাকা বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ করবর্ষে তার অব্যাখ্যায়িত আয় ছিলো ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫ হাজার ১৬৭ টাকা এবং ২০২৩-২৪ করবর্ষের তথ্যানুযায়ী অব্যাখ্যায়িত আয় ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৬ টাকা। যা তার ব্যাংকে জমা ঘোষিত আয় বহির্ভূত কর ফাঁকি সংগঠিত হয়েছে বলে জানা যায়।
২০২২-২৩ করবর্ষের হিসাব অনুযায়ী নিজ জমা, বেতন, বোনাস সম্মানী, টিএডিএ, রেমিট্যান্স লোন ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক হতে ৮৯ লাখ ৫ হাজার ৫৩৭ টাকা এবং অন্যান্য ব্যক্তি হতে ২৭ লাখ ১৭২ টাকা তার ব্যাংকে জমা হয়। অব্যাখ্যায়িত আয় ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫ হাজার ১৬৭ টাকা।
এছাড়া ২০২৩-২৪ করবর্ষের হিসাব অনুযায়ী নিজ জমা, বেতন, বোনাস সম্মানী, টিএডিএ, রেমিট্যান্স লোন ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক হতে ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য ব্যক্তি হতে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ টাকা তার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। তার অব্যাখ্যায়িত আয় ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৪ টাকা।
এই দুই করবর্ষে তার মোট অব্যাখ্যায়িত আয় ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৩ টাকা। যেখানে তার মোট (৩৯,২৮,৪৫৬ + ১৮,৭১,২৭৭) ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৩ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদিকে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন করার অভিযোগ ছাড়াও ভুয়া তথ্য দিয়ে নোবিপ্রবিতে অবৈধভাবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান মো. জসীম উদ্দীন। যেখানে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে হলে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন সেখানে আট বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০১২ সালে তিনি এ চাকরি হাতিয়ে নেন। যা পরবর্তী অডিট আপত্তিতে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকাতে ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে বন্দী নোবিপ্রবি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়; রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন কর্তৃক দাপ্তরিক নথির ডুপ্লিকেট তৈরি করা, সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী পরিবর্তন, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আদায়, প্রতারণা, হুমকি প্রদর্শন এবং নারী সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এর বছর খানেক পরে ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর আরেকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘নোবিপ্রবিতে রেজিস্ট্রার পদে বিতর্কিত সেই জসিমকে নিয়োগে তোড়জোড়’ শিরোনামে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়; বিতর্কিত ও অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে কয়েকজন যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ১১ জনের মধ্যে চারজনের সাক্ষাৎকার কার্ড ইস্যু করা হয়। এ অবৈধ নিয়োগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এবং পিএইচডি সম্পন্ন করা প্রার্থীকেও বাদ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। পরেরদিন নোবিপ্রবি উপাচার্য ২৫ নভেম্বর ২০২৩ রেজিস্ট্রার নিয়োগের সাক্ষাৎকার নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশন সামসুল হক ভবনে নেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি হাসিবুল হোসেন নামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নোবিপ্রবির সমন্বয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ অযোগ্য রেজিস্ট্রার এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললে তিনি তা অস্বীকার করে একটা বিবৃতি প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার যাবতীয় ব্যাংকিং লেনদেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সম্পাদন করি। এর বাইরে অন্য কোনো ব্যাংকে আমার কোনো হিসাব নেই।অগ্রণী ব্যাংকের উক্ত অ্যাকাউন্টে বর্তমানে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। শুধু বর্তমান নয়; অতীতের কোন সময়েও উক্ত হিসাবে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ছিল না। প্রসঙ্গত, আমার বেতন-ভাতার বাইরে উক্ত হিসাবের মাধ্যমে আমার প্রবাসী ভাইয়ের পাঠানো রেমিট্যান্স ও আমার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মসজিদের কিছু দান-অনুদানের টাকা লেনদেন হয়, সেটিও উত্থাপিত অভিযোগের মতো এত বড় অঙ্কের নয়। সমন্বয়কবৃন্দ ইচ্ছাপোষণ করলে আমার ব্যাংক হিসাবের বিবরণী (স্টেটমেন্ট) তাদের দেখাতে রাজি আছি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী অভিযোগটি অসত্য প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হলেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ বিষয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই। আমি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে নিয়োগ লাভ করি। উক্ত পদে নিয়োগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো নিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়নি। তারপরও আমার বিষয়ে প্রিয় সমন্বয়কদের উত্থাপিত নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্রের যেকোনো কর্তৃপক্ষকে স্বাগত জানাই।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ