সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটিকে স্বঘোষিত আখ্যায়িত করে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে এবং প্রায় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী নিজেদের ফেসবুকে তাদের অবাঞ্চিত বলে ঘোষণা দেয় এবং এ ব্যাপারে লেখালেখি শুরু করে।
এদিকে, শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪-০৮-২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ডিন কাউন্সিলের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন ও কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কয়েক দিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা, উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিন কাউন্সিলের জরুরি সভা থেকে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে, ৪ আগস্ট সিকৃবির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীরা তখন থেকেই দাবি করতে থাকে এটি একটি স্বঘোষিত কমিটি। যার সাথে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে সিকৃবির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দাবি করা কৃষি অনুষদের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আসলে বোঝা উচিৎ তারা কাদের কথায় বা প্ররোচনায় পড়ে এমনটা করছে। সারা দেশের ন্যায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও যারা আওয়ামী স্বৈরাচারী ছিলো তারাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলতেছে। ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরাও এর পিছনে জড়িত আছে। এসব স্বৈরাচাররা আবারো আমাদের পূর্বের ভিসি জামাল উদ্দিনকে চাচ্ছে। যেন আবারো ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য চালু হয়। এবং আমাদের এই কমিটিকেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহ্বান করবো তারা যাই করে যেন বুঝে শুনে করে। কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে যেন কিছু না করে।’
তবে ঘোষিত এই কমিটিতে থাকা ভেটেরিনারি অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘সরকার পতনের কয়েকদিন আগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে স্বমন্বয়ক চেয়ে লিংক দেয়া হয়, এর ভিত্তিতে আমি নাম দিই কিন্তু আন্দোলন শেষ হওয়ার পর স্বমন্বয়কদের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশিত হবার পরবর্তী আমার অনেক বন্ধু আমার সাথে যোগাযোগ করে বলে এই লিস্টের কয়েকজন বিভিন্ন রাজনীতির সাথে যুক্ত তাই গত ৭ আগস্ট আমি পদত্যাগ করি।’
এদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে বায়োটেকনোলজি অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তাসনিম সাকিব বলেন, ‘সমন্বয়কদের নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন তারা নিজেদের জায়গা স্পষ্ট করার পরিবর্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে আলাদা তৃতীয়পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করছেন। যেখানে তাদের আসল কাজই হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সমন্বয় করা। আর তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে যা করার চেষ্টা করছেন, সেই কাজটিই এক ধরণের বৈষম্য। যা এই সম্পূর্ণ আন্দোলনের আদর্শের পরিপন্থি। প্রশ্ন আর ধোয়াশা রেখে কোনো গোষ্ঠী যদি নিজেদেরকে সমন্বয়ক দাবি করে তাদের মতামতকে সর্বেসর্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে তাদেরকে সচেতন শিক্ষার্থীরা বয়কট করবেই এবং হচ্ছেও তাই।’
পাশাপাশি কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ অয়ন জানান, ‘ক্যাম্পাসে একটি স্বঘোষিত সমন্বয়ক কমিটি দেখা গেলেও ক্যাম্পাসে আন্দোলনের সময় কোনো সমন্বয়কের কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বর্তমান কার্যক্রমকে ব্যক্তিস্বার্থ, নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও উদ্দেশ্যমূলক মনে করে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ স্বার্থান্বেষী সমন্বয়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।’
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ