সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

এসিআই আন্ডার-গ্রাজুয়েট থিসিসে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিষ্ময়কর সাফল্য

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:০১

কংক্রিট বা ঢালাই শব্দটি আমরা প্রায়ই শুনি। বাসা-বাড়ি, কিংবা স্থাপনা; বর্তমান বিশ্বে এ বস্তুটির ব্যবহার অনস্বীকার্য। আগুনরোধী এ জিনিসটির ব্যবহার দিন দিন বিশ্বে বেড়েই চলেছে। কংক্রিট তৈরির জন্য প্রয়োজন খোয়া, বালু, বাতাস, সিমেন্ট ও পানি। নির্মাণের পর এ জিনিসটি আর্দ্রতা শুষে দাঁড়িয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়। কিভাবে এই বস্তুটিকে আরও কল্যাণকর ও ফলপ্রসূ করা যায় তা নিয়েই চুয়েট শিক্ষার্থীরা করেছেন গবেষণা।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের চার শিক্ষার্থী ভার্চুয়াল আন্ডার গ্রাজুয়েট রিসার্চ সেশন নামক প্রতিযোগিতায় স্থান পেয়েছেন সেরা আটে। বিশ্বব্যাপী আয়োজিত উক্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীরা হলেন- আসিবুল ইসলাম পিয়াস, আবুজর গিফারী সাগর, শাফায়েত রহমান, মো. তাহজুল ইসলাম পিয়াস।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদায়ী বর্ষের দুই শিক্ষার্থী আসিবুল ইসলাম পিয়াস ও আবুজর গিফারী সাগর যৌথভাবে গবেষণা করেছেন কংক্রিটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খোয়া নিয়ে।

এ বিষয়ে আসিবুল ইসলাম পিয়াস বলেন, কংক্রিটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান খোয়া আসে ইট কিংবা পাথর থেকে। বর্তমান বিশ্বে এ দুটি উপাদানেরই ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেজন্য, কিভাবে এটিকে পুনঃব্যবহার করা যায় এবং মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায় সেটিই ছিল আমাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।

পাশাপাশি তিনি আরও যোগ করেন, এমন প্রতিযোগিতায় শীর্ষ আটে স্থান পাওয়া নিতান্তই আমাদের এবং পুরো চুয়েটের জন্য গর্বের। এবার আমাদের লক্ষ্য শীর্ষ তিনে স্থান অর্জন করা। সেটার জন্যও আমরা কাজ করব।

আবুজর গিফারী সাগর বলেন, আমরা বছরের পর বছর কংক্রিট ব্যবহার করায় এক সময় এটি তার কার্যক্ষমতা হারায়। তখন এই অব্যবহৃত কংক্রিট থেকে কিভাবে পুনরায় খোয়াকে আলাদা করে ব্যবহার করা যায় সেটির লক্ষ্যেই আমাদের গবেষণা। আমরা প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছি। আশা করা যায়, পরবর্তী রাউন্ডেও শীর্ষ তিনে স্থান পাওয়ার বিষয়ে আমরা সুখবর নিয়ে আসব।

অন্যদিকে, স্ট্রাকচারার হেলথ মনিটরিং এর জন্য কিভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী শাফায়েত রহমান। এক্ষেত্রে তিনি করেছেন, কিছু সেন্সরের ব্যবহার। যাতে অনুমান করা যায় কখন একটি অবকাঠামোর ক্ষয় শুরু হবে। এর মাধ্যমে একটি অবকাঠামোকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা সম্ভব। আর তার এই গবেষণাই পৌঁছিয়ে গেছে বিশ্ব-দরবারে।

সেরা আটে স্থান পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন। আমি আমাদের স্যারদের এবং আমার শুভাকাঙ্খীদের ধন্যবাদ দিতে চাই। এমন অর্জন নিঃসন্দেহে চুয়েটকে আরও এগিয়ে নিবে।

এ দিকে মো. তাহাজুল ইসলাম পিয়াস করেছেন আরেক যুগোপযোগী গবেষণা। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ধান প্রধান খাদ্যশস্য। সেই ধানের তুষকে প্রক্রিয়াজাত করে সিমেন্টে ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়েই কাজ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে জানান, এসিআই এর ভার্চুয়াল আন্ডারগ্র্যাড সেশনের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত। এই অর্জন আমাকে আরও গভীরভাবে গবেষণা করতে এবং নতুন উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই গবেষণা করতে গিয়ে আমি যে পরিশ্রম করেছি, তার স্বীকৃতি পাওয়া সত্যিই সম্মানের।

উল্লেখ্য, বিজয়ী তিন গবেষণার দুইটিতেই পরামর্শক হিসেবে ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার, চুয়েটের বিভাগীয় উপদেষ্টা ড. জি.এম.সাদিকুল ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা আগেও এসিআইয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী বিজয়ী হয়েছে। করোনা চলাকালীন সময় অনলাইনে প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছে। ঠিক একই ভাবে এবার আয়োজিত আন্ডারগ্রাজুয়েট ভার্চুয়াল রিসার্চ সেশনে আটটির মধ্যে আমাদের তিনটি গবেষণাই বিজয়ী হয়েছে। এটি আমাদের জন্যে অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের বিষয়। আমরা আশাকরি আগামীতেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তাদের এ অর্জন জুনিয়র শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তারা। পাশাপাশি, এমন নতুন নতুন আবিস্কার নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে পৃথিবীকে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ