ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠিত, কি ভাবছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা?

প্রকাশনার সময়: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৬:৫৯ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৮:৩২

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ (১৮ বছর) পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরাসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ও কার্যকর যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেটে বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম পরিচালনার এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভূতপূর্ব উদ্যোগ এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হলো। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে দপ্তর ও অন্যান্য কার্যক্রম অতিদ্রুত শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে দপ্তরের পরিচালক হিসেবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান পলকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে একটি স্মার্ট ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লক্ষ্যপূরণের পথে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নবগঠিত এই দপ্তর নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন।

দেশের বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সঙ্গে পড়াশোনা ও গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হবে:

দেরিতে হলেও ধন্যবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এই দপ্তরের মাধ্যমে দেশের বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সঙ্গে পড়াশোনা ও গবেষণার দ্বারা উন্মোচিত হবে বলে আশা করি। আধুনিক বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যেমন বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে। এই দপ্তরের মাধ্যমেও বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী যোগাযোগ করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে পারবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহী হবে।

মো.বাদশা আলম,

পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে:

এটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনে আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানসিকতা অর্জন ও নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। কমিউনিকেশনের জন্য দেশিয় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ও কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করতে আরও প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক ডিপার্টমেন্ট এর ক্লাস লেকচার দেয়া এবং বুঝার মাধ্যম হিসেবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে পরিবর্তন হবে। মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় ফুটে উঠবে। এর জন্য আমাদের নিজেদের আগে প্রস্তুত হতে হবে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এ দপ্তর কার্যকরী পদক্ষেপ এর অপেক্ষায় আমরা।

রাফিউল ইসলাম রাফি

সাবেক শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রভাষক, জেড এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বহির্বিশ্ব থেকে আমাদের এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে:

একুশ শতকের বিশ্বায়নের যুগে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। দেশের গণ্ডি না পেরোলে কখনোই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের আলোয় আলোকিত হতে পারেনা। এটি আমাদের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর স্যার অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই তার হাত ধরে "ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স" দপ্তরের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ, মানোন্নয়নের দিক থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড়যুগ পরে হলেও আশা করছি বহির্বিশ্ব থেকে আমাদের এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, শিক্ষা ও গবেষণার পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক, দক্ষ কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা উপকরণ, আন্তর্জাতিক হলসহ আধুনিক সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই এই দপ্তরের কার্যক্রম সহজ হবে বলে আশা করছি।

মো. মাসুদুর রহমান,

সহকারী অধ্যাপক,

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্মার্ট ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লক্ষ্যপূরণের পথে এগিয়ে যাবে:

বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাটি বিশ্বজনীন। বিশ্বায়নের এ যুগে শুধু একটি দেশের মধ্যে জ্ঞান চর্চা সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের যেকোন জায়গায় জ্ঞান চর্চা এখন সম্ভব। এরই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ ও অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বহিরাঙ্গণ দপ্তর কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিষ্ঠার দেড়যুগ পরে হলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উক্ত দপ্তরটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংযোগ তৈরি করে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সম্মেলন, এবং অনুরূপ অন্যান্য প্রোগ্রামে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণসহ যাবতীয় বৈদেশিক বিষয়াদি দেখবে এবং সফলতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো সংযোজিত বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে একটি স্মার্ট ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লক্ষ্যপূরণের পথে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।

আফরোজ ইসলাম লিপি,

সহকারী অধ্যাপক,

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ,

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা ও গবেষণার পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে:

দপ্তরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবো উল্লেখ করে দপ্তরটির প্রথম পরিচালক ড.জিল্লুর রহমান পল বলেন, প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর এমন একটি সময় উপযোগী উদ্ভাবনী উদ্যোগের চিন্তা ও বাস্তবায়ন উপাচার্য মহোদয়ের দূরদর্শিতার প্রকাশ। এ কর্ম উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমাকে প্রথম পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করায় উপাচার্য মহোদয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। সবে শুরু-যেতে হবে বহুদূর। এই দপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

ড. জিল্লুর রহমান পল,

প্রথম পরিচালক,

বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি সংযুক্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরতে পারবে:

বিশ্ববিদ্যালয়কে অঞ্চল এবং জাতীয় পরিমলের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই উদ্যোগ। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর মধ্যে আপাতত শুরু করা হলেও আমাদের লক্ষ্য নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়া। সেজন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় চুক্তি বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা, বিদেশি শিক্ষকদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ আরও বেশি বৃদ্ধি করা এই দপ্তরের প্রধান কাজ হবে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই আমরা তিনটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি সম্পন্ন করেছি। এটি আরও বৃদ্ধি ও কার্যকর করা দরকার। মূলত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কার্যকর করার লক্ষ্যে এই দপ্তরটি প্রতিষ্ঠা করা হলো। বিদেশি শিক্ষার্থী, গবেষকদের আবাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বহিরাঙ্গণ কার্যক্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি সংযুক্ত হবে, এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরতে পারবে বলে আশা করছি।

প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর, উপাচার্য, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ