অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন প্রজ্ঞাপন বৈষম্যমূলক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে শেষ দিনের মতো অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে আগামী ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি এবং পহেলা জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন ) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের ভবনের নিচ তলায় অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
এসময় প্রত্যয় স্কিম, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানানো হয় এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
এসময় সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে প্রত্যয় স্কিম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং প্রত্যয় স্কিমকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ভালো সংবাদ এবং অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমাদের এই আন্দোলন থেকে একবিন্দুও পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই জায়গায় আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো।
সিকৃবি গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবু জাফর ব্যাপারী বলেন, শিক্ষকদের যে প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করানো হয়েছে এটা কোনো আন্দোলন নয়। শিক্ষকরা আন্দোলনে নামলে পুরো দেশ সজাগ হয়ে যাবে। যে সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় দিয়েছেন সেখানে আজকে বিশ্বকে আলোকিত করার কারিগরদের মাঠে নামতে হয়েছে। যারা আমাদের নামতে বাধ্য করলো তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, একটি ক্লাসের টপ ৫% থেকে, ১০% থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। আর বিসিএসে একজন প্রশাশনিক কর্মকর্তাকে শুধুমাত্র অ্যাপ্যায়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে এপ্লিকেশন করা হয়। তার মানে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের টারশিয়ারি মানকে ধ্বংস করে দিয়ে- ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা,আমেরিকা থেকে টিচার নিয়ে আসার পরিকল্পনা হচ্ছে। এরপর এখান থেকে আমাদের সন্তানরা মতিউর রহমান, আসাদুজ্জামান তৈরি হবে। কিন্তু এখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও পাবেন না যে মতিউর রহমান হয়েছে। একজন শিক্ষকও পাওয়া যাবে না যিনি রাতের আধারে পাসপোর্ট ছাড়া আখাউড়া বর্ডার দিয়ে পালিয়েছেন বা মার্ডারের আসামি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। অথচ এসব বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষকদের মানমর্যাদা রেখে কাজ করার চেষ্টাকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।সিকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন মৎস্য প্রযুক্তি এবং মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাকিউল ইসলাম, গ্রামীন সমাজবিজ্ঞান ও উন্নয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিঠু চৌধুরী এবং সয়েল সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাসেম। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষদীয় শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর আগে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তার আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ