ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাবিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি

প্রকাশনার সময়: ০৪ জুন ২০২৪, ১৭:০৩

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা।

একইসঙ্গে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সারা দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, একটা বাহারি নাম দিয়ে গত ১৩ মার্চ যে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তা আমি 'শুভঙ্করের ফাঁকি' বলে মনে করি। কারণ এই স্কিমের ফলে আমরা যা টাকা দিবো, একসময় সেই টাকাই ফেরত দেওয়া হবে সর্বজনীন পেনশনের নামে। আমরা আজ এখানে আমাদের জন্য অবস্থান নেইনি। আজ থেকে ২৬ দিন পরে আমাদের সহকর্মী হিসেবে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের রক্ষার জন্য দেশ-সমাজকে রক্ষা করার জন্য এখানে অবস্থান নিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের চেতনা থেকে আমাদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা সেই স্বায়ত্তশাসনের প্রতি চরম অবজ্ঞা, অসম্মানের সমান।

প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম শিকদার বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বাদ‌ দিয়ে মাঝে মধ্যে আমাদের এভাবে পথে অবস্থান করতে হচ্ছে। এটা আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। আমাদের চাকরি পরবর্তী জীবন যাতে একটু ভালোভাবে কাটে সেজন্য পেনশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনীন পেনশন তাদের কথা ভেবে আনা হয়েছিল যাদের চাকরি নেই বা বেসরকারি চাকরিজীবী তাদের একটা সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে। কিন্তু এই পেনশন ব্যবস্থা আমরা চাই শিক্ষকদের জন্য। আমরা তো আমেরিকার মতো সুযোগ সুবিধা চাচ্ছি না। আমরা চাই শিক্ষার মান, শিক্ষকদের মান, গবেষণার মান উন্নত করা হোক।

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, এই দেশের কিছু কুচক্রী মহল আছে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষক, জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক, তাদের কিভাবে অসম্মান করি। যেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে? আসলেই এটি কি সর্বজনীন? এখানে পুলিশ নাই, সেনা বাহিনী নেই। যারা বানিয়েছেন, তারা খেতে চাই না। যারা দুর্বল তাদের উপরে চাপিয়ে দিতে চান। শিক্ষকদেরকে আসলেই হিংসার চোখে দেখেন, শিক্ষক দের বঞ্চিত করার প্রয়াস। মেরুদন্ড বলছি। তাদেরকেই মেরুদণ্ড হিন করে রাখছি। জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল তার কর্মচারীরা একবার প্রশ্ন করেছিলেন, যে আমাদের থেকে শিক্ষকদের বেতন বেশি কেন। তখন তার জবাবে চ্যান্সেলর বলেছিলেন যে শিক্ষক আপনাদের গড়ে তুলেছেন তাহলে আপনাদের থেকে তাদের বেতন বেশি হওয়া আস্বাভাবিক নয় কি। এই জবাব শুনে তখন তার কর্মচারীরা নীরব হয়ে গেছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় দেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষকের গুরুত্ব কতখানি।

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নতুন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ স্কিমে দেশের ৪০০ এর বেশি স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। তবে এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৈষম্য আখ্যা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এর আগে, গত ২৬ মে সর্বজনীন এই পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও ২৮ মে দুই ঘণ্টা ক্লাস বর্জন করেন রাবি ও রুয়েটের শিক্ষকরা।

কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। এসময় বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ