ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ববির হলে ছাত্রলীগের তাণ্ডব, ২ শিক্ষার্থীকে মারধর

প্রকাশনার সময়: ২৮ মে ২০২৪, ২৩:১৮

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে তাণ্ডব ও ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভোলা রোডে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বেলা ৩টায় শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নম্বর কক্ষটিতে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের আরাফাত-রিদম গ্রুপ। এরপর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভোলারোডে ডেকে নিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ৪০২১ নাম্বার কক্ষে অবস্থানকারী অমিত হাসান রক্তিমের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী প্রসেনজিৎ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আবির হাসান লিটন। জানা যায়, আবির হাসান লিটন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নন।

হলসূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৭ মে) রাতে হলে রক্তিম অনুসারী, কর্মী লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ ও লিটনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের এবং হলের ১০০৫ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থীর মধ্য মারামারি ঘটনা ঘটে। সেই মারামারি ঘটনার সূত্র ধরেই আজকে আরাফাত-রিদম গ্রুপ ৪০২১ নম্বর কক্ষটিতে তাণ্ডব চালান এবং ভোলা রোডে ডেকে নিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।

প্রত্যাক্ষদর্শী শেরে বাংলা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত-শান্তসহ আরও ৬-৭ জন ৪০২১ নম্বর কক্ষটির দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন। এবং তারা ভিতরের বেডপত্রগুলো বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন। এরপর লিটন ও প্রসেনজিৎকে ভোলা রোডে ডেকে নিয়ে রিদম-আরাফাতের অনুসারী ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাভেলের নেতৃত্বে ওই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী মারধর করে। জানা যায়, ইট দিয়ে তাদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে, এতে মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে তারা শেরে বাংলায় ভর্তি রয়েছেন।

মারধরের সময় আবুল খায়ের আরাফাত, খালিদ হাসান রুমি ও আলসামাদ শান্ত উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তারা মারধরে অংশ নেননি।

আহত শিক্ষার্থী আবির হোসেন লিটন বলেন, ভূতত্ত্ব ওই খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাভেলের নেতৃত্বে ভোলা রোডে ডেকে নিয়ে আমাদের দু'জনকে মারধর করে। তারা আমাদের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেছে এবং পাইপ দিয়ে পিঠে আঘাত করেছে। প্রসেনজিৎ এবং আমি এখন শেরে বাংলায় ভর্তি আছি।

এ বিষয়ে জানার জন্য আবুল খায়ের আরাফাতকে একধিকবার কল করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মী পাভেলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রিদম-আরাফাত বরিশালের সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অনুসারী। এই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী নেতা আবুল খায়ের আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ছিনতাইসহ তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি একাধিকবার জেলও খেটেছেন। এই গ্রুপের আরেক নেতা আবিদ হাসান গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। আলসামাদ শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অমিত হাসান রক্তিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। অমিত হাসান রক্তিমের পড়াশোনা শেষ হলেও তিনি ওই কক্ষটিতে অবস্থান করতেন তার অনুসারীদের নিয়ে। অভিযোগ আছে কক্ষটি তিনি অবৈধভাবে দখল করে আছেন দীর্ঘদিন থেকেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আমি মাঝে মাঝে ওই কক্ষটিতে যেতাম। কক্ষটিতে অস্ত্র পাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

ছাত্রলীগ কর্মী আবিদ হাসান বলেন, কতিপয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে হলে এ কক্ষটি তল্লাশি করি ও দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। হল প্রশাসনের কাছে আমার দাবি তারা যেন এসব সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়িত করেন।

শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট ড. আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন, আমি ঘটনাটি আপনার থেকেই মাত্র জানলাম। এখন হলে গিয়ে বিষয়টি দেখব। হল প্রশাসন থাকতে ছাত্রলীগ কীভাবে রুমে তাণ্ডব চালায় এমন প্রশ্নে বলেন, কোন রুমে কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে সেটি হল প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। কেউ নিজে থেকে এভাবে তল্লাশি করতে পারে না। এই ব্যাপারে আমি তদন্ত:পূর্বক বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিব।

প্রশাসন-হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৪০২১ নম্বর কক্ষটি এখন পর্যন্ত ফাঁকা রয়েছে অফিসিয়ালি কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিন্তু ছাত্রলীগের নাম করে কক্ষটি দখল করে রেখেছিলেন রক্তিম অনুসারীরা। কক্ষটি থেকে দুটি দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগেও শেরে বাংলা হলের একাধিক কক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশীয় অস্ত্র ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন, কিন্তু সেসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি হল প্রশাসন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন হল প্রশাসনের এমন নিশ্চুপ থাকাই ছাত্রলীগ পার পেয়ে যাচ্ছে বারবার। এবং তারা আরও বেশি অপরাধ কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। বিভিন্ন গ্রুপ থাকায় আধিপত্য বিস্তারে একাধিকবার মারামারি ঘটনা ঘটিয়েছে সক্রিয় গ্রুপ।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ