ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

রাবিতে হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের

প্রকাশনার সময়: ২৭ মে ২০২৪, ২১:৪৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হল গেটে 'লাল কাপড়' ঝুলিয়ে প্রাধ্যক্ষকে প্রতীকী লাল কার্ড দেখিয়েছেন।

সোমবার (২৭মে) দুপুরে হলের ডাইনিংয়ের খাবারে সিগারেটের অংশ পাওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। তবে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের ২০ পিস জার্সি না দেওয়ায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ আন্দোলন করা হয়েছে। জার্সি চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা।

হল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে হলের ডাইনিংয়ে খেতে যান এক শিক্ষার্থী। এসময় তিনি খাবারের মধ্যে সিগারেটের একটা অংশ দেখতে পান। পরে ডাইনিং কর্মচারীদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ডাইনিং ভাঙচুর করেন এবং গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যোগ দেয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা হলের প্রধান ফটকে লাল কাপড় টাঙিয়ে এবং গেটে তালা দিয়ে অবস্থান নেন। প্রাধ্যক্ষকে নিয়ে নানা স্লোগানও দিতে দেখা যায় তাদের। পরে শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের নেমপ্লেট এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এসময় তারা একে একে হলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি ঘড়ি, নোটিশবোর্ড ও গেস্টরুমে ভাঙচুর করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এসময় হলের পানি সমস্যা সমাধান, ক্যান্টিন সংকট নিরসন, ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান, ডাইনিংয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার বন্ধ, খেলার সরঞ্জামের সংকট নিরসন, সিসিটিভি ক্যামেরা সংস্কার, পাঠাগার সংকট দূর করার দাবি জানান।

একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে হলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ এবং সহকারী প্রক্টর জাকির হোসেন। তারা ছাত্রদের সাথে কথা বলেন এবং সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন। সেইসাথে আগামীকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসে আলোচনা করার কথা জানান।

এরপরেও আন্দোলন না থামলে ঘটনাস্থলে আসেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এরপরই প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক উপস্থিত হন। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্তিমিত হয়।

তবে ডাইনিংয়ের খাবারে সিগারেটের অংশ নয় বরং ছাত্রলীগ নেতাদের জার্সি না দেওয়ায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই আন্দোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, আন্তঃহল এথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য গতকাল (২৬ মে) হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ক্রীড়া বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন শিক্ষকদের দিয়ে খেলোয়াড় বাছাই করা হয়েছে। এর আগে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ ও মাসুদ আমার কাছে কয়েকজন খেলোয়াড়ের তালিকা দিয়েছিলো। তবে উপাচার্য স্যারের নির্দেশনা ছিলো, দলীয় ছেলে দেখে না বরং যোগ্যদেরই অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে। বাছাইয়ে তাদের তালিকা দেওয়া ছেলেরা বাদ পড়ে যায়। পরে তারা একেকজন দশটি করে মোট বিশটি জার্সি দাবি করে। কিন্তু হলের ফান্ড থেকে অতিরিক্ত টাকা জার্সির জন্য খরচ করার উপায় ছিলো না। তাই আমি তাদের জার্সি দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করি।

আন্দোলনের বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বলেন, তারা হলে যেসকল সংস্কারের দাবি তুলেছে তার সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। আর আন্দোলনের সময় সেখানে সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী ছিলো না। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগের তৌহিদ, মাসুদ ও ইমরান। সিগারেট একটা হালকা বস্তু। রান্নার হাড়িতে থাকলে সেটি আগেই ভেসে উঠতো। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা খাবারে সিগারেট ফেলে এই আন্দোলন করেছে।

খাবারে সিগারেট পাওয়ার বিষয়ে ডাইনিংয়ের পরিচালক শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, সিগারেটের খোসাটা তরকারিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ফেলা হয়েছে। রান্নার জায়গা আমরা যথেষ্ট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে রান্না করেছি। রান্না শেষে আমি নিজে এই রান্না যাচাই করি। কারণ এই রান্না আমি খাই সাথে আর দশটা শিক্ষার্থীও খাবে। সেজন্য এমন ভুল হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

প্রাধ্যক্ষের কাছে জার্সি দাবি এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা। একজন গেমসরুমের সরঞ্জামাদির বিষয়ে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বীকার করলেও অপরজন প্রাধ্যক্ষের কাছে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সেইসাথে এই আন্দোলনে ছাত্রলীগকে জড়ানোয় প্রাধ্যক্ষের সুদূরপ্রসারী মতলবের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এবিষয়ে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তৌহিদ বলেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা। আমি প্রাধ্যক্ষের কাছে জার্সির জন্য যাইনি। যেখানে একটা হলের সমস্যা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে তার হয়তো কোনো সুদূরপ্রসারী মতলব আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশ্বাস করেন কি না এই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।

অভিযোগের বিষয়ে হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ বলেন, গেমসরুমের সরঞ্জামাদি প্রাধ্যক্ষ স্যার ওনার বিভাগে নিয়ে ব্যবহার করেছেন। আমি এই বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জার্সি বা খেলোয়াড়ের তালিকা নিয়ে ওনার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। অন্য কেউ এই বিষয়ে কথা বলেছে কি না আমি জানি না। সেইসাথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, আন্দোলনের শেষদিকে আমরা প্রক্টর স্যারসহ লতিফ হলে গিয়েছিলাম। রান্নার স্থানটিও আমরা পরিদর্শন করেছি এবং খাবারে সিগারেটের ছবিও দেখেছি। হয়তো রান্নার সময় ভুলবসত সিগারেটের অংশ যেতে পারে। এ বিষয়ে স্যাররা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। জার্সির জন্য ছাত্রলীগের কোনো ছেলে প্রাধ্যক্ষের কাছে যায়নি। এই বিষয়টি আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আজকের আন্দোলন সম্পূর্ণই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর প্রাধ্যক্ষের কাছে তাদের দাবির বিষয়টি আমি অবগত না।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ