রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে একাংশের নেতাকর্মীদের মারধর করে কক্ষে তালা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
রোববার (১২ মে) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল এবং মাদার বখ্শ হলের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে মারধর করে কক্ষ তালাবদ্ধ করেন তারা। ভুক্তভোগীরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাবিরুজ্জামান রুহুলের অনুসারী।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষ থেকে ৩২৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন কাবিরুজ্জামান রুহুলের অনুসারীরা। রোববার ভোরে এ কক্ষগুলোতে তালা দিয়ে, কক্ষের অধিকাংশ বাসিন্দাদের মারধর করে হল ছাড়া করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা।
এদিকে মাদার বখ্শ হলের ২০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন আশিকুর রহমান অপুর অনুসারীরা। এদিন ভোরে তাদের কক্ষ থেকে বের করে, রুমে তালা দেওয়া হয়। এসময় তাদের মারধর করেন সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা। এছাড়া হবিবুর রহমান হলের ২২০ নম্বর কক্ষে থাকতেন আশিকুর রহমান অপু। তার কক্ষ থেকে মানিব্যাগ চুরির অভিযোগ করেন তিনি।
রোববার সরেজমিনে বিকেলে মাদার বখশ হলে দেখা যায়, ২০৮ নম্বর কক্ষের চারজন আবাসিক শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিয়েছে সভাপতির অনুসারীরা। এসময় হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী একজনের মোবাইল কেড়ে নেন এবং চড় থাপ্পড় মারেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শহীদ হাবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগেই আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে আমার এবং বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি রুহুলের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হয় যে সভাপতি, সম্পাদকের নেতাকর্মীর ওপর হামলা করেছি। আজকে ভোরে হবিবুর রহমান হল এবং মাদার বখশ হলে আমার কর্মীদের কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা দেওয়া হয়েছে। এসময় তাদের মারধর করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল কেড়ে নিয়েছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতাকর্মীরা। আমার কক্ষ থেকেও ওয়ালেট চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় হল প্রশাসনকে জানিয়েছি, ব্যবস্থা নেবে বলে আমি মনে করি।’
শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু হল সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল বলেন, ‘গতকাল সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে ঝামেলা দেখে আমার কর্মীরা নিজ নিজ হলে চলে যায়। আমার বাসাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় আমি বাসায় অবস্থান করি। কারণ আমি চাইনি ঝামেলার কোনো দায় আমি বা আমার কর্মীদের ওপর পড়ুক। কিন্তু ভোরবলায় সংগঠনে থাকা কিছু অসাংগঠনিক ছেলেপেলে বঙ্গবন্ধু হল থেকে আমার কর্মীদের বের করে মারধর করে এবং কক্ষে তালা দেয়। হয়তো তারা আমাদের বিপক্ষ মনে করে, এমনটা করতে পারে। এ বিষয়ে হল প্রশাসনকে জানিয়েছি, আশা করি এ বিষয়ে প্রশাসন শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না।’
অভিযোগ পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি সকাল থেকে হলেই অবস্থান করছিলাম, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদের ফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রোকোনুজ্জামান বলেন, আমি হলে অবস্থান করছি। এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কারো যদি সমস্যা হয় আমাকে জানাক। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো প্রাধ্যক্ষ দেখবেন। আমরা অভিযোগ পেলে প্রাধ্যক্ষদের জানাবো, তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ