চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোতে মাদক সেবনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই চলে মাদক সেবনসহ মাদকের আড্ডা । এবার এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক কারবারিরও। এ নিয়ে নিজ গ্রুপের কর্মীদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারধরেরও শিকার হয়েছেন অভিযুক্ত আতিকুজ্জামান জয়। তিনি চবি শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ 'বিজয়ে'র কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নম্বর কক্ষে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে নিজ উপগ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন জয়। শুরুতে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও 'বিজয়' উপগ্রুপের একাংশের নেতা ইলিয়াসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না এমন অভিযোগে মারধরের শিকার হয়েছে বলে জয় অভিযোগ করলেও পরে মাদক সংশ্লিষ্টতার জন্য বেধরক মার খেয়েছে বলে জানা যায়। মারধরে অভিযুক্তরা সবাই জয়ের ব্যাচমেট।
ব্যাচমেটদের অভিযোগ, জয়ের মাদক সংশ্লিষ্টতার জন্য কয়েকবার সতর্ক করা হলেও সে উগ্র আচরণসহ খারাপ ব্যবহার করে। মারধরের ঘটনার রাতে তার আবাসিক হলের রুমে গিয়ে মাদক সেবন ও বিক্রির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে জয় রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে গালাগালি করে যা এ পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এতে আহত হয় জয়।
এর পরপরই মাদক সেবনসহ মাদক কারবারির তথ্য সামনে আসে আতিকুজ্জামান জয় নামের এ ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। মদ্যপানরত অবস্থায় ও মদের বোতল হাতে কিছু তথ্যচিত্র ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায় খালি গায়ে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ওয়ান টাইম গ্লাসে পানীয় পান করছে জয়। ব্যাচমেটদের দাবি এসময় মদ পান করছিলেন তিনি। এছাড়াও সিনিয়র, ব্যাচমেট ও জুনিয়রদের নিয়ে প্রায় সময়ই নিজ কক্ষে মাদক সেবনের আসর বসাতেন বলে তার অভিযোগ করে তারই গ্রুপের রাজনৈতিক সহকর্মী ও ব্যাচমেটরা।
মারধরের ঘটনার পরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ছাত্রলীগের বেশ কয়েকেজন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিনে ওই ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ পরিদর্শন করে বিদেশি ব্র্যান্ডের কয়েকটি মদের বোতলসহ মাদক দ্রব্যের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নম্বর কক্ষে।
জয়ের এ মাদক সেবন ও কারবারি নিয়ে মুখ খুলেছে তাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ও একই গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী, ব্যাচমেটসহ অনেকে।
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল জোবায়ের নিলয় বলেন, আমরা এএফআর আর আলাওল হলে 'বিজয়' গ্রুপ করি। এই দুই হলে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু আশিকুজ্জামান জয় সকল ধরনের মাদকের সাথে যুক্ত। পাশাপশি গোপনে মাদক কারবারি করাসহ তার রুমে সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে মাদকের আসর বসাতো। এ বিষয়ে আমরা তাকে সতর্ক করেছি এমনকি সিনিয়দেরকেও জানিয়েছি। পরবর্তীতে সোমবার বন্ধুরা সবাই তাকে সতর্ক করতে গেলে সে সবার উপরে চটে বসে যা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ হাতাহাতির ফায়দা নিয়ে আমাদের মানহানির চেষ্টা করেছে। তবে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার অনেকগুলো ছবি এরমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
আরেক ব্যাচমেট তনয় কান্তি সরকার বলেন, আমাদের ১৮-১৯ সেশনের যারা রাজনীতি করে তারা মাদকের ব্যাপারে খুবই সচেতন। অথচ আমাদের বন্ধু আশিক এক্সট্রিম পর্যায়ে নেশা করে। সে সব ধরনের নেশা করতো এবং মাদকের প্রমোট করতো। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে সবার সঙ্গে তর্ক করে যা হাতাহাতি অবধি গড়ায়।
তবে মাদক সেবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তেমন সদুত্তর দেয়নি আশিকুজ্জামান জয়। মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি কোনো মাদক কারবারির সাথে জড়িত নই। মাদক সেবন করলে সেটার ব্যবস্থা প্রশাসন নেবে। এজন্য কেউ তো আমাকে মারধর করার অধিকার রাখে না।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জয়ের রুম সিলগালা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, আমরা আজকে হলের আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেছিলাম। ৪৪০ নম্বর কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে। এসব নিয়ে কেউ যেমন আইন হাতে তুলে নিতে পারবে না, তেমনি মাদকের সঙ্গেও জড়িত হতে পারবে না। কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, আশিকুজ্জামান জয়েট মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে হলের প্রভোস্টকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। মাদকের সঙ্গে কারো কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে ।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ