সরকারি মাদকাসক্ত ও চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ও পরামর্শক কাজী লুতফুল কবির বলেন,‘বর্তমানে দেশে গড়ে প্রতি সতেরো জনের একজন মাদকে আক্রান্ত। এ সংখ্যা প্রায় কোটির কাছাকাছি। সরকারি হাসপাতালে মাদকাসক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ সুযোগ এবং সহজলভ্যতার কারণে শিক্ষার্থীরা মাদকের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে।’
সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্র ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি আরও বলেন,‘মাদকাসক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশীরভাগই দীর্ঘদিন গাঁজা সেবনের ফলে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সিগারেটের মাধ্যমে মাদকের সাথে পরিচয়পর্ব ঘটে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মাদকের নেশায় জড়িয়ে আসক্ত হয়ে পড়েন মাদকসেবীরা। প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে ফিরিয়ে আনা গেলেও দীর্ঘদিন মাদক সেবন করা ব্যক্তিদের চিকিৎসা ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর।’
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন,‘মাদকের অপব্যবহারের মাধ্যমে তরুণদের বিপথগামী করা হচ্ছে। জাতির মেধা-মননকে ধ্বংস করা হচ্ছে। মাদক গভীরভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাই এর থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক বলেন,‘মাদকসেবীরা মাদককে আনন্দের বিষয়বস্তু মনে করে। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে প্রথমবার মাদক সেবন করে। এরপর আর সেখান থেকে বের হতে পারে না। মাদকের কারণে স্বাস্থ্য, চিন্তা-চেতনা, ভবিষ্যৎ, পারিবারিক জীবন, ব্যক্তিজীবন সবকিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ জগতে একবার প্রবেশ করলে বের হয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন। মাদক থেকে দূরে থাকার লক্ষ্যে পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা জোরদার করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার বলেন, ‘আগে মানুষ নিজেদের মধ্যে আবেগ অনুভূতি আদান-প্রদান করতো। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডিভিজুয়ালিজম চর্চা বেড়ে গেছে। যৌথ পরিবারে ভাই-বোনসহ সবার মাঝে আগে যে মিথস্ক্রিয়া হতো, এখন সেটা হচ্ছে না। সবাই আলাদা আলাদা হয়ে থাকছে। অনলাইনেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। ফলে সবার মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে। মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। হতাশা ভুলতে অনেকেই মাদকের প্রতি ঝুঁকছে। এছাড়া নানবিধ কারণে মাদক সেবনের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।’
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ