অব্যবস্থাপনা, নিয়োগে অনিয়মসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এমনকি ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন পর্ষদ যেমন- বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, নিরাপত্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের প্রায় বছরখানেক পরেও সম্মানিভাতা দেওয়ার নজির রয়েছে। তবে এবার অস্ত্রধারী প্রহরীদের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করিয়ে নেওয়ার পরেও দায়িত্ব-ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
নিরাপত্তা দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় গেল বছরের ২৫ মে। এরপরে বিভিন্ন ইউনিটের কোটাধারী শিক্ষার্থীদের মৌখিক সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় জুনের ১৮, ১৯, ২০ ও ২২ তারিখে। এ সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা দপ্তরে ১৫ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন ৩টি ডিউটিতে ৬ জন করে অস্ত্রধারী কর্মী চাহিদা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চবির একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কোটা সাক্ষাৎকারের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সচিব এসএম আকবর হোছাইন।
নিরাপত্তা দপ্তর আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনে একজন কর্মীর ১টি ডিউটি সম্পন্ন হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন চক্রাকারে দায়িত্ব পালন করে ৬ জন নিরাপত্তা কর্মী। টানা ৮ দিনে পালাক্রমে ২৩ জন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী ৪৬টি ডিউটি দেয়। জনপ্রতি প্রতিটি ডিউটির জন্য নির্ধারিত ১ হাজার ৩১০ টাকা ভাতা পাওয়ার কথা। সে হিসেবে ৪৬টি ডিউটির জন্য ৬০ হাজার ২৬০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মচারীদের জোটেনি তাদের পারিশ্রমিকের সম্মানি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েকবার গিয়েও সমাধান পায়নি তারা। তাদের প্রাপ্য টাকা আত্মসাৎ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোছাইন বলে দাবি অস্ত্রধারী প্রহরীদের।
এ বিষয়ে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী মো. সাহেদুল ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমরা কোটা সাক্ষাৎকারের জন্য গত বছর জুনের ১৫ তারিখ থেকে ২২ তারিখ রাত ১০টা পর্যন্ত ২৩ জন নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করি। এ দায়িত্বের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সচিব এসএম আকবর হোছাইন কোটা সাক্ষাৎকার দিনগুলোতে দৈনিক ৬ জন করে অস্ত্রধারী গার্ড মোতায়নের জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠান। সেজন্য কেউ ১টা ২টা বা তিনটা করে ডিউটি দিয়ে মোট ৪৬টি ডিউটি দেয়। আমরা দায়িত্ব পালন করলেও আমাদের অস্ত্রধারী গার্ডের ভাতা দেয়নি প্রশাসন।
ভুক্তভোগী একাধিক অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মচারী বলেন,আমরা ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রশাসনের চাহিদার আলোকে দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু দায়িত্ব পালন করে প্রাপ্ত সম্মানি পাইনি। এ বিষয় নিয়ে আমরা আকবর হোছাইনের সাথে পাঁচবারের অধিক দেখা করি। তিনি আমাদের পুরো টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি ৫০ শতাংশ টাকা দিবে বলে জানায়। পুরো ডিউটি দিয়েও ৫০ শতাংশ টাকা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূত এবং গার্ডদের পারিশ্রমিক আত্মসাৎ করার শামিল।
তারা আরও বলেন, এ বিষয়ে আকবর হোছাইনের কাছে নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ পাঁচবারের অধিক যাওয়া হলেও তিনি তার কোনো সমাধান দেননি। এমনকি নিরাপত্তা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন ও সম্মানির বিভিন্ন নথিপত্র দেখালেও তিনি নতুন নিয়ম দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে আমরা কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি আমাদের ৫০% বেশি দিবেন না বলে জানিয়ে দেন।
তবে এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোছাইন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা প্রহরীদের ডিউটির টাকা বাকি আছে, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমার কাছে এ বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে আসেনি। যদি কথা বলতে আসতো, তাহলে জানতে পারতাম। রেজিস্ট্রার স্যার জানতে পারেন। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী না বলে তিনি ফোন কল কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
এদিকে এসএম আকবর হোছাইনের বক্তব্য সরাসরি মিথ্যাচার বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মীদের টাকা পরিশোধ না হওয়ার বিষয়টি একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে একাধিকবার বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সবাই জানে এ বিষয়ে। এমনকি আমরা এ বিষয়ে নোটও দিয়েছিলাম। উনি তা গ্রহণ করেননি। উনি বলেছিলেন, ১৬টি ডিউটির টাকা দিয়ে বাকিগুলো দেবেন না। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মীরা তা গ্রহণ করেনি। প্রহরীরা ৪৬টি ডিউটির টাকা পাবে, ১৬টি ডিউটির টাকা কেনো নেবে? এ নিয়ে তার সঙ্গে আমাদের বাক-বিতণ্ডাও হয়। আকবর সাহেব প্রমাণ করুক যে, উনি এ বিষয়ে জানেন না!
নয়াশতাব্দী/টিএ/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ