ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

অবন্তিকার মৃত্যু: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালো শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৮

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার বিচার ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করার দাবিতে প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে আয়োজিত প্রতিকী সমাবেশে এই লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়।

সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, জগন্নাথে যেকোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিবো। এখানে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল থাকলেও তার কেন কার্যক্রম নেই। এটি কার্যকর করতে হবে। এটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু কিছু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না। যখন একটা ঘটনা সামনে আসছে, তখন তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হচ্ছে, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আমরা এভাবে আর এগোতে চাই না। আমরা আরেকটি অবন্তিকাকে দেখতে চাইনা, আরেকটি অংকনকে দেখতে চাই না। আমাদের আন্দোলন ততদিন পর্যন্ত জারি থাকবে, যতদিন পর্যন্ত এটার একটা স্থায়ী সমাধান না হচ্ছে।

সমাবেশে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ সাকিব সোবহান বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি করোনার সময় কুকুরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া বরাদ্দ টাকা মেরে খেয়েছে। আজকে সেই প্রক্টরিয়ার বডি নিপীড়ন বিরোধী সেলের নামে ডামি সেল গঠন করে রেখেছে। প্রক্টরিয়াল বডি যখন-তখন ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে মুচলেকা সংগ্রহ করতো। এখন থেকে সেই খেলা আর চলবে না। যৌন নিপীড়ন সেলে ছাত্র-শিক্ষকসহ বাহির থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিপীড়ক বিরোধী সেলের নামে যে টর্চার সেল যারা তৈরি করে রেখেছে, সেই প্রক্টর অফিসে আমরা সাতদিনের মধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেবো।

মহিউদ্দিন আল আরাবি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্যকে নিয়ে মসজিদে গিয়ে শোক সভা করে ঘটনাটিকে হালকা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের সহপাঠীর মৃত্যু হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমাদের কথা শোনতেই হবে।

এর আগে আইন বিভাগে আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম অবন্তিকার মৃত্যুতে শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শোক সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যা যা করা সম্ভব আমি সব করছি। আমি সবসময় নারীদের নিয়ে কাজ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক থাকাকালীন আমি হলে হলে গিয়ে কাউন্সিলিং করেছি।

তিনি আরও বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদেরকে ছোট করে দেখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নিপীড়ন সেল কার্যকর করা হবে। আমি নিজ দায়িত্বে তা করবো।

এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন এবং চেয়ারম্যানদেরকে আজকের মধ্যে প্রতিটি বিভাগে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ বক্স বসানোর নির্দেশ দেন। তিনি জানান, যৌন নিপীড়ন বক্সের চাবি শুধু তার কাছে থাকবে এবং তিনি এর তদন্ত করবেন যাতে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের ফেসবুক পেজে দীর্ঘ একটি লেখা পোস্ট করেন অবন্তিকা। সেখানে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন অবন্তিকা।

তিনি লেখেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই। তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী এবং তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।’

অবন্তিকার মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে তার সহপাঠীসহ শিক্ষার্থী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তার মৃত্যুর পর থেকেই ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়ে নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মকর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ