বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে দুইটি দৃষ্টি নন্দন গেট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে প্রধান ফটকের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
উপাচার্য তার বক্তব্যের শুরুতেই বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জীবনদানকারী প্রত্যেককে স্মরণ করেন। পরে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রেখেছি। এই গতিধারাক্রমে আপনাদের সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা পথ চলছি। সেই ধারাবাহিকতাতেই আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের কাজ আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের দুটো গেট হবে।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিবার মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সময় দিচ্ছি, মনোযোগ দিচ্ছি, কাজ করছি। বিশেষ করে আজকের গেটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত তারা কিন্তু সৌভাগ্যবান। কেন না এধরনের কাজ প্রতিনিয়ত হয় না। তাই আমরা সব কাজে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
গেটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
সদ্য নির্মিত সুগঠিত সীমানা প্রাচীরের সাথে দৃষ্টিনন্দন এই গেট ২টি নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বলয় আরও শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে দৃষ্টিনন্দন ফটক দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডেনটিটি (পরিচয়ক) হিসেবেও সকলের মধ্যে পরিগণিত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
নতুন গেট নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ (স্নাতক) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বাপ্পী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘সিম্বলিক’ নিদর্শন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বহন করে এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও আবেগের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে প্রধান গেট। ১৭ বছর ধরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশে কোনো গেট নেই। একটি গেট আছে যা ক্যাম্পাস থেকে অনেক দূরে। এটি আমাদের জন্য একটি অপূর্ণতা ছিল।
তিনি আরও বলেন, এত বছর পর সকল ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে দৃশ্যমান বেষ্টনী এবং গেট নির্মাণের কাজ হাতে নেয়ায় উপাচার্য স্যারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই গেট ২টি দ্রুততম সময়ে দৃশ্যমান হবে।
স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য স্যারের উদ্যোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংবলিত অত্যন্ত নান্দনিক নকশায় দুটি গেটের কাজ শুরু হচ্ছে। এ জন্য উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর স্যারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ গেটের কাজ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আরও জোরদার হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরও নিরাপদ পরিবেশে বিচরণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও গেটগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করবে। উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা করছি।
প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত নানাবিধ কর্মকাণ্ড এড়াতে প্রবেশমুখে গেটের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা জোরদারে প্রবেশ মুখে দৃষ্টিনন্দন দুটি গেটের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
উল্লেখ্য, আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন এই গেট ২টি হবে একই ডিজাইনের। প্রতিটি গেটের ওপরে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। গেটের বাম ও ডান পাশে থাকবে পাঁচটি করে খণ্ডায়িত মোট ১০টি দেয়াল। বাম পাশের প্রথম দেয়ালে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। লোগোর নিচে থাকবে বাংলা ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ডান পাশের প্রথম দেয়ালে থাকবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত 'কারার ওই লৌহ-কপাট' গানের ৯টি লাইন।
লাইনগুলো হলো- ওরে ও তরুণ ঈশান/বাজা তোর প্রলয় বিষাণ/ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি/কারার ঐ লৌহকপাট/ভেঙে ফেল কর রে লোপাট/ রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী/ ওরে ও তরুণ ঈশান/বাজা তোর প্রলয় বিষাণ/ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি। গেটের মাঝে থাকবে রাস্তা বিভাজক।
উভয়পাশেই থাকবে দারোয়ানদের জন্য ছোট কক্ষ। গেট ২টির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ফাস্ট গেট' নামে পরিচিত চেকপোস্ট সংলগ্ন স্থানে এবং অন্যটি 'সেকেন্ড গেট' নামে পরিচিত চেকপোস্ট সংবলিত স্থানে নির্মিত হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ