ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুয়াকাটা ঘুরে এলেন যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৭ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৭

লেখাপড়ার একগুঁয়েমিতা ভাব দূর করতে ভ্রমণের বিকল্প দ্বিতীয়টি হতে পারে না। সমুদ্রের গর্জন, বালির স্পর্শ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য – এসব কিছু মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আর যখন এই অভিজ্ঞতা আসে বন্ধুদের সাথে, তখন তো কথাই নেই! সেই রকমই ভ্রমণের সাক্ষী হলো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইন্জিনিয়ারিং (আইপিই) শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ‘সাগর-কন্যা’ খ্যাত মনোরম একটি ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। ভ্রমণ বিলাসী ও পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণ ও অবকাশ সময় কাটানোর অন্যতম মনোরম ও মন-মুগ্ধকর জায়গা হলো কুয়াকাটা। শুধু দেশে নয়, কুয়াকাটার পরিচিতি এখন বিশ্বজুড়ে। বেলাভূমির একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বিড়ল মনোরম দৃশ্য দেখার সমুদ্র সৈকত। নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি।

পরিকল্পনা অনুযারী ৪ মার্চ রাত ৯টায় ক্যাম্পাস থেকে ৪ জন শিক্ষকসহ দুই বাস যাত্রা শুরু করে বিপ্রবির আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গাড়িতে বিভিন্ন গানের তালে তালে প্রত্যেকে যাত্রার মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে থাকে। সকাল ৬টায় আমাদের গন্তব্য হোটেল রোজ বেইলি সামনে পৌঁছায়। এরপর আবাসিক হোটেলে চেক ইন করে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম সেরে নিলাম।

উপকূলের কাছাকাছি হোটেল সৈকতে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্রাম ও সকালের নাস্তা করে সাগরের সঙ্গে প্রত্যেকে আনন্দ উপভোগ করতে থাকে। দৃষ্টি সীমায় শুধুই থৈথৈ জলরাশি। সমুদ্রের গর্জনে ও হালকা হাওয়ায় সবার মনপ্রাণ একদম জুড়িয়ে যায়। প্রথমে সমুদ্র কিছুটা শান্ত থাকলেও ধীরে ধীরে সমুদ্রের নোনা জল আর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে দোল খেতে শুরু করে সবাই। কেউ ঝিনুক কুড়ায়, কেউ নিজের ছবি তোলায় ব্যস্ত। আবার কেউ সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে ভাসতে শুরু করে। সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। এর ফাঁকে আমরা গ্রুপ ছবি তুলে ফেললাম। তিন চার ঘণ্টা এভাবে কেটে যায়। আস্তে আস্তে সূয্যিমামা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তে শুরু করলো। পরে আমরা হোটেলে ফিরে আসি। এরপর চলে যায় খাবার হোটেলে। সবাই নানারকম সামুদ্রিক মাছ দিয়ে সেরে নিলো দুপুরের খাবার। খাবার শেষে প্রত্যেকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কেউ অটো বাইক আবার কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান পরিদর্শন করতে বেরিয়ে পড়ে।

আমরাও কয়েকজন মিলে অটো বাইক ভাড়া করে শুটকি পল্লী, মোহনা, ঝাউবন, লেবুতলী বিচ যাই। ঘড়ির কাঁটা তার আপন গতিতে চলার পর সূর্যাস্থের সময় আসে, আকাশে লালাভাব ছড়িয়ে সূর্য আস্তে আস্তে সমুদ্র গর্ভে ডুবে যায়। সূর্যাস্তের শেষে সমুদ্রের বিচে ক্যাম্প ফায়ার করে রাতের খাবারের জন্য টোনা ও কোড়াল মাছের বার-বি-কিউ এর আয়োজন করা হয়।

এসময় সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে অনেকে হোটেলে ফিরে যায়। আমরা কয়েকজন খালি পায়ে সমুদ্রের তীরে হাঁটি এবং সমুদ্রের গর্জনকে নিস্তব্ধ হয়ে অনুভব করি। রাত ২টা ৩০ মিনিটে মটকা চা খেয়ে আমার হোটেলে ফিরে যাই।

স্পষ্ট সূর্যোদয় দেখার জন্য ভোর ৫টায় অটো বাইক ভাড়া করে গঙ্গামতি বিচের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। আগের দিন যেভাবে সূর্য সমুদ্র গর্ভে ডুবে গিয়েছিল ঠিক একই সাইকেলে সমুদ্র গর্ভ ভেদ করে সূর্য উদয় হয়। গঙ্গামতি বিচেই ম্যানগ্রোভ বনের মতো মনোমুগ্ধকর জায়গা রয়েছে। সূর্যোদয় দেখা শেষ করে লাল কাঁকড়া দেখার জন্য কাউয়ারচর বিচের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। রোদের তেঁজ বাড়ার সাথে সাথে কাউয়ারচর বিচে পৌঁছাই।

আমার কাছে কুয়াকাটা ভ্রমণের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল এটি। রোদ বাড়ার সাথে সাথে বালি ভেদ করে পুরো তীর জুড়ে লাল কাঁকড়া বেড়িয়ে ছিল। সমুদ্র তীরটি ছিল খুব পরিষ্কার। মৃদু হাওয়া ও উত্তাল ঢেউ এক অসাধারণ মূহুর্ত! এরপর আমরা রাখাইন পল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। সেখানে পৌঁছে সবাই নিজেদের জন্য আচার, কেউ চকলেট, কেউ তাতের কাপড় কিনে নেয়। কাছাকাছিই বৌদ্ধমন্দির ও মিষ্টি পানির কূপ রেয়েছে।

কেনাকাটা শেষ করে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে বিশ্রাম নেই। বিকেলে যারা কেনাকাটা করেনি তারা করে নেয়। আমরা কয়েকজন সমুদ্রকে কাছে থেকে আরো কিছু সময় অনুভূতি ভাগ করে নেই। রাতের খাবার শেষ করে হোটেল রোজ বেইলি নিচে সকলে একসাথে হই। এরপর ভ্রমণের আরো একটি আকর্ষণীয় ইভেন্ট র‍্যাফেল ড্র এর আয়োজন করা হয়। যেখানে ১৫ টি আকর্ষণীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগের দিনের খেলায় যারা পজিশন পেয়েছিলো তাদেরও পুরষ্কার দেওয়া হয়। এরপর রাত ১১টায় কুয়াকাটা থেকে ফেরার জন্য যাত্রা শুরু করি। গাড়ি নিয়ে আমরা আনন্দ করতে করতে সকাল ৬টায় যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেলাম।

ভ্রমণ শুধু বিনোদন মাত্র নয়, জীবনের অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়। আমাদের এই একদিনের কুয়াকাটা সফর জীবনের মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে। কিছুদিন পরই প্রত্যেকে আলাদা আলাদা জায়গায় চলে যাবে। কিন্তু এই একদিনের আনন্দের দৃশ্য স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে সারা জীবন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ