ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিক্ষোভে উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং আহ্বান

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩৮

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নানাভাবে হেনস্থার অভিযোগে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রের স্থায়ী বহিস্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর কার্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ব্যাংক এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবনেও তালা দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং আহ্বান করলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

জানা যায়, বুধবার (১৩ মার্চ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে ছাত্রী হেনস্থার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগীয় প্রধান থেকেও অপসারণ করা হয়।

তবে স্থায়ী বহিষ্কার না করে শিক্ষকদ্বয়কে অনির্দিষ্টকালের ছুটি দেওয়ার উক্ত অফিস আদেশের পর বিক্ষোভ শুরু করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬ এর ১১(১০) ধারায় অধিকারপ্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মাননীয় উপাচার্য কর্তৃক পরবর্তী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হলো।

‘একইসাথে রেজুয়ান আহমেদ শুভকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো এবং মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিভাগীয় প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এ আদেশ অদ্য ১৩/০৩/২০২৪ তারিখ পূর্বাহ্ন হতে কার্যকর হবে।’

এ অফিস আদেশে ন্যায্য বিচার পাননি বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীর সহপাঠী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারাবি বলেন, আমরা ন্যায্য বিচার পাইনি। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থার প্রতিদান পাইনি। রেজুয়ান শুভ্র ও সাজন সাহাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা হলে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বলেন, আমি তোমাদের শিক্ষক, তোমাদের উপাচার্য। আমি তোমাদের প্রতিনিধি। আগামীকাল (১৪ মার্চ) আমরা জরুরি সিন্ডিকেট ডেকেছি। সেখানে আমি শিক্ষার্থীদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবো। তোমরা আমাকে জানিয়েছো, বলেছো। আমি আগামীকাল সিন্ডিকেটে এগুলো তুলে ধরবো। তোমরা যা চাচ্ছো তাই হবে। আমার উপর আস্থা রাখো।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে মেসেজের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলে বলেন, সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের অশোভন মেসেজ দিতেন, মধ্যরাতে চা খেতে ডাকতেন। এছাড়াও নাম্বার টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী।

বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রের নামেও অভিযোগ তুলে বলেন, রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র ছোঁয়াকে ভালো রেজাল্টের লোভ দেখিয়ে বিভাগের অপর দুই শিক্ষক রিমন সরকার ও ফাহমিদা সুলতানার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিতে বলেন।

বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষিতে টানা ১৩ দিন আন্দোলনে করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠন। বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের কুশপুত্তলিকাও দাহ করে শিক্ষার্থীরা।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ