ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬

দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, ১৫ কিলোমিটার যানজট

প্রকাশনার সময়: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩৬ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৯:৪৪

যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন যানবাহনে আটকে থাকা লোকজন ও পবিত্র রমজানের দিন হওয়ায় আশেপাশের শতশত পোশাক শ্রমিক নিজ কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েন। তারা কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছান এবং বিরক্তি প্রকাশ করেন।

বুধবা (১৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অভিযুক্ত দুই শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও সহকারী সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়। এছাড়াও রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে তার বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয় শিক্ষার্থীরা।

এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনে নামে। তাদের দাবি, বাধ্যতামূলক ছুটি নয় বরং স্থায়ী বহিষ্কার। প্রথমে তারা প্রশাসনিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা সোনালী ব্যাংকের শাখা অফিসে তালা দেন। পড়ে একে একে বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, প্রক্টর অফিস, সামাজিকবিজ্ঞান ভবন, ব্যাবসাপ্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে সকল প্রশাসনিক ও শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। পড়ে শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দেয় ।

এরপরেই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জিরো পয়ন্টে অবরোধ করেন দুই শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। এসময় দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় আন্দোলনকারীরা।

প্রশাসনিক ভবনে দীর্ঘসময় অবরুদ্ধ থাকার পর একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সামনে আসেন উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এসময় ভিসি ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছি সেটি কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রুত তারা প্রতিবেদন দেবে এবং সেই অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তোমরা শান্ত থাকো। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা এর বিচার করবো। তবে ভিসির এই কথায় শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এসময় তারা উপাচার্যের অপারগতাকে নিন্দা জানিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারাবী বলেন, আমরা আমাদের দাবিতে অটল থাকবো। যদি আজকের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার না হয় তাহলে আমাদের রক্তের ওপর পা দিয়ে আপনাদের যেতে হবে। আমরা আমাদের অবস্থানে এক চুল ছাড় দেব না।

দিনব্যাপী আন্দোলনকারীদের দমানোর চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা। কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়।

মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে মুঠোফোনে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। তিনি আশ্বাস দেন আগামীকাল এর মধ্যে দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করবেন। তিনি উপাচার্যের সাথে কথা বলবেন এবং সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয় আসবেন। আপাতত তিনি আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান করেন। পরে তারা ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও উপাচার্যের আশ্বাসে আগামীকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া একই বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রের বিরুদ্ধে মদদ দেয়ার অভিযোগ এনে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একাধিকবার তালা দেওয়া হয় প্রশাসনিক ভবনে, ওই বিভাগটিও তালাবদ্ধ করা হয় এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হয়।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ