ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬

প্রশাসনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হচ্ছে ধর্ষক: আনু মুহাম্মদ 

প্রকাশনার সময়: ১০ মার্চ ২০২৪, ২২:৫১

'প্রশাসনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হচ্ছে ধর্ষক। এছাড়া তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অছাত্র, দুর্বৃত্ত, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজও তৈরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা হল থেকে শুরু করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক পর্যন্ত প্রত্যেকটা অপরাধের দায়-দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।' বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

রোববার (১০ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রশাসনে এখনো যৌন নিপীড়ক শিক্ষকও আছেন এবং যৌন নিপীড়ক শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কিন্তু প্রশাসন দিতে চায়নি। তখনকার আন্দোলনের জোরেই প্রশাসন বাধ্য হয়ে শাস্তি দিয়েছে৷ প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় যেমন ধর্ষক, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ তৈরি হয়, তেমনি এরকরম মেরুদণ্ডহীন লোভী প্রশাসনও সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়।’

এর আগে, সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরে তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকর। এসময় তারা ৫ দফা দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি প্রক্টর ও নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করা,অবিলম্বে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের অবৈধ ও নীতিবহির্ভূত বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা, ধর্ষণে অভিযুক্ত ও পলায়নে সহযোগিতাকারীদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করা, মীর মশাররফ হোসেন হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষসহ হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা ধর্ষণে অভিযুক্তকে পলায়নে সাহায্য করার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি করে শাস্তি নিশ্চিত করা,আবাসিক হল থেকে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট উৎখাত করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল অছাত্রকে হল থেকে বের করা।

এছাড়া, সমাবেশে বক্তারা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের (একাংশ) সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বহিষ্কারাদেশ বাতিলসহ অন্যান্য দাবি জানান। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিস্থিতি তা দেশের পরিস্থিতির চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। একটা গণতান্ত্রিক শোষণ চলছে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। যারা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে৷ অথচ ধর্ষণ-মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকা ছাত্রলীগের কিছু হয়নি। আর যারা এসবের প্রতিবাদ করছে তারা বহিষ্কারের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ যারা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তাদের বহিষ্কার ও দমন করা হবে এমনটাই বার্তা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দেশেও যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও নানাভাবে সরকার কর্তৃক দমন-পীড়ন করা হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে অন্যায়ের স্রোত ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র তো এমন ছিল না, তিনি তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিতি আঁকার পূর্বে অনুমতি নেওয়ার সংস্কৃতি ছিল। ছাত্র ইউনিয়ন কোনো গ্রাফিতি আঁকার ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়, এর আগে ছাত্রলীগও অনুমতি নিত। কিন্তু গত চার বছর ধরে ছাত্রলীগ থেকে অনুমতি নেওয়ার সংস্কৃতি নাই হয়ে গেছে। তারা এখন যেকোনো অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে গ্রাফিতি আঁকা হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদের ভাষাকে রুখে দিচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা এই সংহতি সমাবেশের মাধ্যমে গ্রাফিতি আঁকার দায়ে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারদেশ বাতিলের দাবি জানাই।’

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ