অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, লাঞ্ছনাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষা বিষয়ক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মেহেদী হাসান রাসেলের বিরুদ্ধে। বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন কৃষি ব্যবসা ও উন্নয়ন শিক্ষা ইনস্টিটিউটের (আইএডিএস) সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনোয়ার হোসেন সোহেল।
সোমবার (৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ওই অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী সোহেল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহ।
লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগে বাকৃবি অফিসার পরিষদের নির্বাচনে মেহেদী হাসান রাসেল ও আতিকুজ্জামান রয়েল ছিলেন একদল অনুসারী এবং প্রতিপক্ষ দলের অনুসারী ছিলেন মো. মনোয়ার হোসেন সোহেল। সেই থেকেই তাদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। গত ১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অফিসার পরিষদ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন সোহেল। ওইসময় রাসেল সোহেলের সামনে এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং লাঞ্ছিত করেন। হিসাব শাখার এডিশনাল ট্রেজারার (বাজেট) মো. আতিকুজ্জামান রয়েলের মাদক সেবনের একটি ছবি রয়েলের স্ত্রীকে প্রদান করেছেন এমন অভিযোগে সোহেলকে গালিগালাজ করেন রাসেল। গালিগালাজের পাশাপাশি সোহেল ও তার পরিবারের প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন রাসেল।
শুধু রাসেল নয় শিক্ষা বিষয়ক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার জিয়াউল হাসান (টিটু) এবং এনাটমী ও হিস্টোলজি বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাজমুল হাসান হৃদয়ও তাকে অপদস্ত করার চেষ্টা করে।
অভিযোগপত্র থেকে আরও জানা যায়, ইতিপূর্বে হৃদয়কে কেন্দ্র করে রাসেল আরও কয়েকবার সোহেলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন এবং মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। রাসেলকে চাঁদা না দেওয়ার কারণে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সোহেলের সাথে অপমানজনক আচরণসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন রাসেল। ভীত শঙ্কিত হয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মাঝে মাঝে বাড়িতে চলে যেতেন সোহেল। পরিবারসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে আইনি সহায়তা নিতে বাধ্য হবেন ভুক্তভোগী সোহেল।
ভুক্তভোগী জানান, ইতিপূর্বে আতিকুজ্জামান রয়েল তার ওই সংঘবদ্ধ গ্রুপের অন্যতম সদস্য রাসেলকে সাথে নিয়ে সদ্য সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. রাকিব উদ্দীন এবং হিসাব শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা এডিশনাল ট্রেজারার মো. সাজ্জাদ হোসেন মন্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হন। অতঃপর এ বিষয়গুলো নিয়ে হিসাব শাখার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোপত্র দিলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ হতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। রয়েলের নেতৃত্বে রাসেল, টিটু ও হৃদয় প্রতিদিন অফিসার পরিষদ কার্যালয়ের পিয়ন কক্ষে জোর জবরদস্তি করে ইয়াবা নেশার আড্ডা জমায় এবং মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেন।
অভিযুক্ত রাসেল বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। সোহেল নিজেই মাদকসেবী। এমনকি ২০১৭ সালে ইয়াবাসহ ধরা পড়ায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিলো। ওই মামলা এখনও চলমান রয়েছে। সোহেল নির্বাচনকালীন থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাকে এ ব্যাপারে খুবই সাধারণভাবে সাবধান করেছি। তবে তাকে কোনো হুমকি বা গালি দেওয়া হয়নি। এরকম কোনো প্রমাণ তিনি কখনই দিতে পারবেন না। আমাকে হেনস্তা করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব কাজ করা হচ্ছে।'
মাদকাসক্তের অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সোহেল বলেন, '২০১৭ সালে আমার বিরুদ্ধে মামলার ঘটনাটি সত্য। তবে ওই ঘটনার পর থেকে মাদকসেবন ছেড়ে দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহ বলেন, 'আমি অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাহিরে আছেন। তিনি ক্যাম্পাসে আসলে তার সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখানে যেহেতু অনেকগুলো মানুষ জড়িত তাই তদন্ত বা বিচার বা অন্যান্য কাজে একটু সময় লাগতে পারে।'
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ