ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক সাজনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৮:৩৩

ছাত্রীকে মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অঙ্ক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পড়ে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, অন্তরঙ্গের ভিডিও লিংক শেয়ার করা এবং কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হয়রানি মতো নানান অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ তুলেছেন একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়াসহ আরও অনেকে।

রোববার (৩ মার্চ) সাজন সাহার অনৈতিক প্রস্তাবের মেসেজের একাধিক স্কিনশর্ট JKKNIU-TSC গ্রুপ, JKKNIU গ্রুপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন ওই শিক্ষার্থী। পোস্টের ক্যাপশনে তুলে ধরেন শিক্ষাজীবনে শিক্ষক দ্বারা দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিত্র।

পরে ধীরে ধীরে অন্য ভুক্তভোগীরাও সাজন সাহার কুপ্রস্তাবের স্কিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে থাকেন। রাত না পেরোতেই একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে সাজন সাহার কু-কীর্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে যায় সাজন সাহার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ না করলেও রাতেই ইমেইলে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রশাসনকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাত পেরিয়ে ভোরের আলো পৌঁছাতেই গণ আন্দোলনে রুপ নেয় সাজন সাহার কর্মকাণ্ড। তাদের সহপাঠীরা প্রশাসনিক ভবনের কেচিগেট আটকিয়ে ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ৬ দফা দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহাকে স্থায়ীভাবে চাকুরি হতে অপসারণ বা চাকরিচ্যুত করতে হবে, অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং সহপাঠী সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ২০১৮-১৯ সেশনের (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বিবিএ-এর ফলাফল অনতিবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে, ভবিষ্যতে একাডেমিক কার্যক্রমে এবং শিক্ষার্থীদের ওপরে যেন কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে, দফাগুলো আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি তাদের সাথে কথা বললে আন্দোলন থামিয়ে উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করায় আজকের (সোমবার) মতো আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।

জানা যায়, জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানকে মৌখিকভাবে এবিষয়ে জানালে সংকট উত্তরণের জন্য ভুক্তভোগীকে বেধে দেন একাধিক শর্ত। যার মধ্যে রয়েছে বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলনার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।

শিক্ষকের দেওয়া অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সানজানা আহসান ছোঁয়া শিক্ষাজীবনে নেমে আসে বিপদ। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে নেওয়া হয় জরিমানা। নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায় আটকে যায় থিসিস পেপার। আরও বিভিন্ন রকম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীকে। সময়ের সাথে ঘনীভূত হতে থাকে সংকট। সর্বশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খোলেন তিনি।

এবিষয় অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন সাহার সাথে যোগাযোগের জন্য তার অফিসে গেলেও পাওয়া যায়নি। পরে একাধিকবার কল করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তাদের যে অভিযোগ তারা এটি বিভাগীয় প্রধান বরাবর জানালে ব্যবস্থা নিতাম। তবে তারা সেটা করেননি। তারপরেও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, এবিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ থাকলে সবাই জানতো। অভিযোগ করলেই হবে না শুধু, সত্যতাও প্রমাণ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এটি খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। আমার কাছে ছেলেমেয়েরা এসেছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ