সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) পাঁচজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র নকল করে প্রকাশের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একজন সহকর্মীর কাছে একটি গবেষণাপত্র রিভিউ করার জন্য পাঠানো হয়। আমি পরবর্তীতে পেপারটি চেক করে দেখি আমার একটি প্রজেক্টের আন্ডারে পূর্বে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের আইডিয়ার সাথে মিলে যায় এই কাজটি। পাশাপাশি এখানের পাঁচজন গবেষকের মধ্যে দুইজন (মো. জোবায়ের রহমান রনি ও রাসেল মিয়া) আমার পূর্ববর্তী প্রজেক্টে আমার সুপারভিশনে কাজও করেছে, যে পেপারটির সাথে এই পেপারের অনেকটাই মিলে যায়। তা ছাড়া এই গবেষণাটির ডাটাগুলোও যে ম্যানুপুলেটেড এতেও কোনো সন্দেহ নেই। এবং তারা কোনো ল্যাবরেটরিতে এই ডাটাগুলা নিয়ে কাজ করেছে তারও কোনো উল্লেখ নেই। সেইসাথে এই গবেষণার ফান্ডিং এ একটা বিশাল গলদ রয়েছে।
ড. শামীমা নাসরিন বলেন, গবেষকরা বলছেন ২০২২ সালের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপে পাওয়া অর্থ তারা এই গবেষণা কাজে ব্যয় করেছেন। তবে আমি যতটুকু জানি তারা সকলেই ২০১৯ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের সকলেই মেধাবী শিক্ষার্থী। কিছুদিন পর হয়ত তারা দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যাবে। আমার শিক্ষার্থীদের থেকে এমন একটি অনৈতিক কাজে আমি অত্যন্ত হতাশ ও লজ্জিত’।
এবিষয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা সিস্টেমের পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিনের থেকে তার একটি গবেষণাপত্র থেকে চৌর্যবৃত্তির একটি অভিযোগ শুনেছি, তবে ছুটির দিন থাকায় তিনি অফিসিয়ালি অভিযোগ জানাতে পারেননি। তিনি অফিসিয়ালি অভিযোগ জানালে আমরা রিসার্চ সিস্টেম থেকে তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এমন গর্হিত অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মামুন Q2 জার্নালে প্রকাশ হতে যাওয়া তার দুইটি গবেষণা কাজ উইথড্র করে নিয়েছেন। যেখানে মো. জোবায়ের রহমান রনি ও রাসেল মিয়া নামের অভিযুক্ত দুইজন শিক্ষার্থী তার দলের সদস্য ছিলেন।
তিনি বলেন, এমন সদস্যদের নিয়ে আমি কোনো পেপার পাবলিশ করতে চাই না যারা নৈতিকভাবে এতটাই পিছিয়ে আছে’।
এবিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান গবেষক মো. জোবায়ের রহমান রনি জানান, ‘পেপারটিতে কোনো চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় আমরা নিইনি। এখানের ডাটাগুলো সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ আমাদের দলের গবেষকেরা মিলেই করেছি। এবং সুপারভিশনে ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। কোনো ডাটাই ম্যানুপুল্যাটেড না। আর এই ডাটা নিয়ে কাজ করতে কোনো ল্যাবরেটরিরও প্রয়োজন হয় না। তাই ল্যাবের কথা এখানে উল্লেখ নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে ড. শামীমা ম্যামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছেন না। তাই আমাদের পক্ষ থেকে ম্যামকে সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝানো ও নিজেদের সঠিক প্রমাণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অনুষদীয় ডিন স্যারের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি অনুষদের সকল শিক্ষককে নিয়ে আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) একটি জরুরি মিটিং এর ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি আমরা সেখানে আমাদের গবেষণাটির অথেনটিসিটি প্রমাণ করতে পারবো।'
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ