খানজাহান আলীর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবনের প্রকৃতি ও প্রাণিবৈচিত্র্য সব পর্যটকের কাছেই প্রিয়। এসব স্থান উপভোগের জন্য বেছে নেয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বেরোবিসাস)। সমিতির সদস্য ১১জনের একটি টিম নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ১০ ঘণ্টার মধ্যে খুলনায় পৌঁছান। পরের দিন সকালে নির্ধারিত বোটে উঠি আমরা। বোট চলতে থাকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে।
ঘণ্টাখানেক পশুর নদীর বুকে ঘুরে ফিরে, করমজল পয়েন্টে বোট রেখে ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে থাকি বনের নানা প্রজাতির গাছ, পাখি’সহ নানা প্রজাতির জীবজন্ত। মোংলা বন্দর থেকে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খানজাহান আলীর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বাস থেকে নামতে না নামতে হাইওয়ের পাশে দেখি চারপাশে লাল ইটের ষাট গম্বুজ মসজিদ। জন প্রতি ৩০ টাকা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ। এক টিকিটে জাদুঘর ও মসজিদ ঘুরে বিকেলে আমরা রওনা হই খানজাহান আলীর মাজারে।
সেখানে সুবিশাল দীঘি দেখে সন্ধ্যায় রওনা হই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে। সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাথে মতবিনিময় করে চলে যায় খুলনা রেলস্টেশন। এরপরে রাতের ট্রেনে আবার রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। এভাবে সুন্দর একটি ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয়। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি গঙ্গা নদীর মোহনায় অবস্থিত।
বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো এই স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। এর প্রাকৃতিক পরিবেশ সবসময় প্রকৃতিপ্রেমী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুরা প্রতি বছর এখানে বেড়াতে যায়। ভূগোলবিদরা সময় ও স্থানের সঙ্গে মানুষ আর পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চালান। আমাদের শিক্ষা সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ ও চিত্তবিনোদন। সুন্দরবনের যেসব স্থানে দর্শনার্থীরা সাধারণত ভ্রমণ করে সেগুলো হলো- করমজল, হিরণ পয়েন্ট, কটকা বিচ, স্মরণখোলা, টাইগার পয়েন্ট, দুবলার চর ইত্যাদি।
আমরা করমজল, কটকা, দুবলার চরসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। সুন্দরবনে ভ্রমণকালে স্থানীয় জনসাধারণ, বন বিভাগ, পর্যটকসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে কিছু তথ্য মিলেছে। একদিনের ভ্রমণের জন্য করমজল পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কারণ সুন্দরবনের প্রবেশপথে ও মংলা বন্দরের সবচেয়ে কাছে করমজল অবস্থিত। পাখিপ্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণি তো আছেই। হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র এই করমজল। এ ছাড়া এখানে লবণাক্ত পানির কুমির, ডুব হাঁস, বানর, সাপ, শিয়াল, নদীর ডলফিন চোখে পড়ার মতো।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল ও ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ অবদান রাখবে পর্যটন খাত। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে এই ম্যানগ্রোভ বন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। আবাসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভ্রমণপিপাসুরা মূলত তিন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে সুন্দরবনে যায়। যেমন বাস, ট্রেন ও বিমান।
ঢাকা থেকে বিমানে যশোর বিমানবন্দরে নেমে বাস অথবা ট্রেনে খুলনায় যেতে হবে। তবে অধিকাংশ মানুষ সড়কপথ বেছে নেন। আমরাও সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য বাসে চড়েছি। খুলনা ও মংলায় রাতে থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টহাউজ আছে। কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে পর্যটন শিল্পে আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না সুন্দরবন।
এর মধ্যে অন্যতম পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি বিনোদন, গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সুন্দরবন। যেমন- পর্যটন শিল্প বিকাশে ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা প্রয়োজন। পর্যটন কেন্দ্র বিকাশে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সুন্দরবনের অধিকাংশ অংশ বাংলাদেশে, তাই এই সম্পদ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামোর উন্নয়ন জরুরি।
সুন্দরবন ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকদের উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ও টেলিফোন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন দরকার। পর্যটকদের ভ্রমণের স্থানগুলো নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন তারা আবারও আসতে আগ্রহী হয়। একইসঙ্গে খুলনায় বিমানবন্দর স্থাপন, রেল ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করতে হবে। পর্যটকরা যেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই হোটেল বুকিং, বিমান ও ট্রেনের টিকিট পেতে পারে এমন উদ্যোগ নিতে হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ