আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০১১ সালের আজকের এই দিনে দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ১৪ বছরে পদার্পণ করছে।
দক্ষিণবঙ্গের বাতিঘর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে স্ব-মহিমায় ভাস্বর। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি এরই মধ্যে নিজস্বতা তৈরি করে নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সাফল্যে গর্বিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে:
১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশালের বেলস পার্কের বিশাল জনসভায় ঘোষণা দেন, ঢাকার বাইরে পরবর্তী যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি হবে বরিশালে। এর পরে নানা ২০১০ সালের ১৬ জুন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত আইন পাস হয়। পরবর্তী সময়ে প্রাথমিকভাবে বরিশাল জিলা স্কুলের পরিত্যক্ত কলেজ ভবনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফরে এসে দেশের ৩৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খানকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৪টি অনুষদের ৬টি বিভাগের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৬টি বিভাগে ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী, ২১০ জন শিক্ষক, ১২১ জন কর্মকর্তা এবং ১৫২ জন কর্মচারী রয়েছেন।
ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন প্রত্যয়: প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন অনিয়ম, আন্দোলন ও উন্নয়নের অভাবে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে নতুন বছরে পদার্পণে পেছনে ফিরতে চান না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে চান তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫টি বিভাগে নয় হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ আবির বলেন, বর্তমান উপাচার্য শিক্ষার্থী বান্ধব। তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন, যা গত ১০ বছরে হয়নি। তিনি সেশনজট কমিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবি পূরণ করেছেন।
নজরকাড়া সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাস: কীর্তনখোলা নদীর তীরে অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দেওয়া ৫০ একরের ক্যাম্পাসকে বলা হয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রকৃতির আপন হাতে যেন এর সৌন্দর্য গড়ে তোলা হয়েছে। শরতে শুভ্র সাদা কাশফুল ছেয়ে যায় ক্যাম্পাস। বসন্তে পলাশ ফুলে রঙ্গিন হয়ে উঠে মুক্তমঞ্চের আঙ্গিনা। পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসে ডানা মেলে উড়ে টিয়াপাখি আর বন্য কবুতরের দল। শালিকের কিচিরমিচির, ভোলা রোডের নিসর্গ সৌন্দর্যে যেকোনো মানুষকে এক মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় নিঃসঙ্গতা। মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীদের আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে উঠে, তালতলা। লন্ডন ব্রিজে প্রেমিকের প্রেম নিবেদনে প্রেমময় হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবোধ। আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্মদিন হিসেবে নবসাজে সেজেছে ক্যাম্পাসটি। পতাকার রঙে রঙিন হয়ে গেছে ঝাড়বাতির আলোয়। সামিয়ানার নিচে তৈরি হয়েছে বিরাট মঞ্চ। অতিথিদের গ্রহণে পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হবে দিনটি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে বেলা ১১টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনন্দ র্যালি, দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা এবং বিকাল ৪টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এবারের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী, প্রাক্তন চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও প্রাক্তন উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা, সদস্য, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল।
এছাড়া থাকবেন জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম, পুলিশ কমিশনার, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, অত্যন্ত জাঁকালোভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে আশা জাগাতে পেরেছি। নতুন বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সকলকে জানাতে চাই, একটি শিক্ষার্থী বান্ধব স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ