ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

‘অ্যাকুয়াকালচার থেকে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৪৭ শতাংশ মাছ‘

প্রকাশনার সময়: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫১

বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলের মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং বৈশ্বিক জলজ চাষ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। অ্যাকুয়াকালচার চাষ থেকে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ মাছ উৎপাদন করা হয়। একটি মাছের সকল অংশ ব্যবহার যোগ্য। বর্তমানে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও মাছ থেকে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ব্যথানাশকের মত ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। অনেক মাছের চামড়া থেকে দামি জ্যাকেট উৎপাদন করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২০০ মিলিয়নে পৌঁছাবে, যার ফলে মাছ চাহিদার সাথে সরবরাহের একটি চাপের সৃষ্টি হবে। তাই সমুদ্রের গভীরের মাছ ধরার জন্য লং লাইন ফিশিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের সর্বোচ্চ যোগান নিশ্চিত করতে হবে। সামুদ্রিক উদ্ভিদ ব্যবহার করে হালাল খাবার ও জেলাটিন উৎপাদন নিশ্চিত করতেও ব্যাপক গবেষণা করতে হবে।

'এসডিজি অর্জনে স্মার্ট অ্যাকুয়াকালচার এবং মৎস্য চাষ' প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) দুইদিনব্যাপী তৃতীয় দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এসব কথা বলেন।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বাকৃবির সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে সম্মেলনটি উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে ফিশারিজ সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এফএসবি) ও বাকৃবি মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ। এ সম্মেলনে ৩০০ জন অংশগ্রহণ করছে যার মধ্যে ৫ জন বিদেশি অংশগ্রহণকারী রয়েছে। সম্মেলনে গবেষণা নিবন্ধের ১৭০ টি মৌখিক এবং ৭০ টি পোস্টার উপস্থাপন করা হবে।

সম্মেলনে ফিশারিজ সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাকৃবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, বাকৃবি মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম নওশাদ আলম, বাংলাদেশ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, ডিপার্টমেন্ট অব ফিসারিজের (ডিওএফ) উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) পরিচালক ড. মোহসেনা বেগম তনু এবং কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশে মৎস্য খাতের অবদান, মৎস্য গবেষণার সফলতা, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, মাছের ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, মুক্তাচাষ সম্প্রসারণ এবং জীবন্ত জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানান বিষয় তুলে ধরেন। এছাড়াও এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনায় বলা হয় যে, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৮৩টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে ৭১ টি মাছের প্রজনন ও জিন পোল সংরক্ষণের জন্য এবং ১২ টি মুক্ত জলাশয়ে মাছের ব্যবস্থাপনার জন্য। যা দেশে মৎস্য উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়ে এসময় আরোও আলোচনা করা হয়।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এখন সময়ের একটা দাবি। যার গুরুত্ব আমাদের সংবিধানেও দেওয়া আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু পুষ্টির প্রাপ্যতা ২২৫০ কিলো ক্যালোরি। কিন্তু এই পুষ্টির ৭০ ভাগ আসে উদ্ভিজ্জ উপাদান বা কার্বোহাইড্রেট থেকে। একইভাবে বাংলাদেশের মানুষের প্রোটিন প্রাপ্ততার হার মাথাপিছু ৬৬ গ্রাম। এই প্রোটিনেরও ৭০ ভাগ আসে উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে। সে ক্ষেত্রে প্রাণিজ প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করার ক্ষেত্রে মাৎস্য সেক্টর একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। গবাদি পশুর বজ্র্যসহ নানা বজ্র্য পুকুরে মাছের খাদ্য হিসেবে প্রদান করা বন্ধ করতে হবে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয় হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাছেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে এগুলো ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকে ফিশারিজ সেক্টরকে কন্ট্রোল করা না গেলে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট কন্ট্রোল করা যাবে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপাদান গুলো ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে তাহলে শ্রম ও কম জনবলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরির সাথে সাথে স্মার্ট কৃষক তৈরি করতে হবে যাতে তারা স্মার্ট প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। স্মার্ট এগ্রিকালচার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশ ভঙ্গুর হয়ে যাবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ