ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নবীন ছাত্রকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এতে ভুক্তভোগীকে গভীর রাতে বিবস্ত্র করে কুরুচিপূর্ণ আচরণ ও রড দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের গণরুমের ১৩৬ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬ নং কক্ষে কিছু সিনিয়র পরিচয়পর্বের নামে তাকে ডাকে। এ সময় তাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে সিনিয়ররা। পরে ভুক্তভোগীকে নানা কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে বাধ্য করলে সে অস্বীকৃতি জানায়, পরে তাকে বার বার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখেন অভিযুক্তরা।
এ ছাড়াও অভিযুক্তরা তাকে নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। ভয় দেখিয়ে বার বার বেড-পত্র বাহিরে ফেলে দেয় বলে জানান ভুক্তভোগী ওই ছাত্র।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, 'গত বুধবার আমার সাথে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে পরে হলের ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইয়েরা বিষয়টা মিটমাট করে দেয়। এরপর অভিযুক্তদের হলে তেমন একটা দেখা যায়নি।'
অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাগর ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, 'এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওইদিন রুমে ছিলাম না, পাশের রুমে ছিলাম।'
আরেক অভিযুক্ত কাফিকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, 'বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। যদি ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেয় এবং অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ কর্মী হয়ে থাকে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, 'এবিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানতে পেরে হলের নেতাদের সাথে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে বিষয়টি আমার কাছে অনেক ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আমার পক্ষে কঠিন।'
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, 'বিষয়টি আমি শুনিনি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভয় না পেয়ে সংশ্লিট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।'
এর আগেও লালন শাহ হলের নবীন এক ছাত্রকে ‘বিবস্ত্র করে’ র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তবে অজানা কারণে অভিযোগ তুলে নেন ভুক্তভোগী।
নয়া শতাব্দী/ডিএ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ