ঢাকা, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩১, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
জাবি ধর্ষণকাণ্ড

স্বামীকে বাঁচাতে সাহায্য চেয়েও পাননি ভুক্তভোগী

প্রকাশনার সময়: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৫৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ধর্ষণকাণ্ডে টর্চার সেলে আটকা তার স্বামীকে বাঁচাতে হল প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি ভুক্তভোগী নারী।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৩ জানুয়ারি রাত ১০টা ২৫ মিনিটে ভুক্তভোগী নারী হল গেটে এসে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে সাহায্য চান। হলের ভেতরের দিকে হাত ইশারা করেন তিনি। কিন্তু হল প্রশাসন থেকে কোনো সাহায্য পাননি।

ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, হল গেটে আসার আগেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষিত হয়েও তিনি স্বামীকে বাঁচাতে হল গেটে আসেন। কিন্তু কোনো সাহায্য পাননি। হলের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, আমরা আর কি করতে পারি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার সাহস আমাদের নেই। তবে আমরা হল প্রভোস্টকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি।

সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা যায়, রাত ১০টা ৪২ মিনিটে ভুক্তভোগীর স্বামী ও অভিযুক্ত মুরাদ হল থেকে বেরিয়ে আসেন। ১০টা ৪৩ মিনিটে ভুক্তভোগীকে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরপর দেখা যায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। এসময় ভুক্তভোগীর সামনেই তার স্বামীকে মারতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে হল অফিসের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ভুক্তভোগী ও তার স্বামী ঢাকা-আরিচা সংলগ্ন মীর মশাররফ হল গেটের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। এরপর রাত ১টা ১২ মিনিটে মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ও সাব্বির হাসান সাগরকে ডাইনিংয়ের রান্না ঘরের পিছনের দরজার তালা ভাঙতে দেখা যায়। তার পাচঁ মিনিট পর দেখা যায় মোস্তাফিজুর রহমান হল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলম ঘটনাটি জানলেও হলে উপস্থিত হয় রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে।

সূত্রমতে, হল প্রভোস্ট ১০টা ২৫ মিনিটে আবাসিক এলাকা অরুনাপল্লীতে ছিলেন। যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। অথচ ঘটনাস্থলে আসতে তার সময় লাগে ১ ঘণ্টা ২৮ মিনিট। ঘটনাস্থলে এসেই তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন। অভিযুক্তদের সাথেও কথা বলেন। ততক্ষণে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা হলের সামনে জড়ো হতে থাকে। বিক্ষুব্ধরা বারবার অভিযুক্তদের আটকে রাখার কথা বললেও প্রভোস্ট তা করেননি বলে জানা যায়৷

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ পরাণ ৪ তারিখ দুপুর ১২টা ১ মিনিটে মোস্তাফিজের রাস্তা ধরেই পালিয়ে যান। এ বিষয়েও হল প্রভোস্টের গাফিলতি ধরা পড়েছে।

মীর মশাররফ হোসেন হলের একাধিক ছাত্ররা বলেন, 'বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলের সামনে থেকে চলে গেলে হল প্রশাসন হলের গেট খোলা রেখে দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শাহ পরান পালিয়ে যান। হল প্রভোস্টের উচিত ছিল হল সিলগালা করে রেখে দেওয়া এবং দিনের বেলা আবার তাকে ধরার জন্য চেষ্টা করা।'

এবিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন,'পুলিশ ও হল প্রশাসন সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ছিল৷ এরপর পুরো হল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুলিশের মতো তো আমার কাছে এতো জনবল নেই। তবুও আমি গার্ডদের দিয়ে হলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি৷ কিন্তু হলের অনেক পকেট গেট আছে, সেখানে তো গার্ডদের রাখা সম্ভব হয় না। তাই সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেছে।'

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ