জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের নানা অপকর্মের সাক্ষী মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষটি। এটি যেন অপরাধের অভয়ারণ্য। গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকেও আটকে রাখেন এই কক্ষে।
মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান হলের 'এ' ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। কক্ষটি 'টর্চার সেল' নামে পরিচিত। মূলত চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের জন্য যে কাউকেই এই কক্ষে আটকে নির্যাতন করা হতো। শুধু নির্যাতন নয়, এ কক্ষে নিয়মিত ইয়াবা ও মদ সেবনের আসর বসাতেন তিনি। এমনকি ধর্ষণের ঘটনার দিন দুই বোতল মদ দেখতে পান বলে জানান ভুক্তভোগী নারীর স্বামী।
সরেজমিনে দেখা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের তৃতীয় তলার 'এ' ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষের জানালাগুলোর গ্লাসে বাইরে থেকে নীল রঙের পেপার লাগানো। ফলে ভিতরে কি ঘটছে তা বাহিরে থেকে আঁচ করার সুযোগ নেই। কক্ষের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলবে সাজানো-গুছানো বিছানা। পর্যাপ্ত আলোক সুবিধাসংবলিত এ কক্ষের দেয়ালগুলোতে নতুনভাবে রঙ করা। টেবিল-চেয়ার ও বইয়ের রাখা তাক থাকলেও সেখানে নেই কোনো শিক্ষা উপকরণ। কক্ষের খাটের নিচে পড়ে আছে কয়েকটি রড ও বাঁশের তৈরি লাঠি। এই কক্ষে গত বছরের মে মাসে আশুলিয়া থানার একজন পুলিশ কনস্টেবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সমঝোতায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলেও জানা যায়।
এছাড়া হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, মোস্তাফিজ ও বহিরাগত মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা ও মাদকের কারবারি করতেন। এ কারণে প্রায়ই মামুন হলে এসে থাকতেন। ঘটনার দিনও তারা হলে ছিলেন। এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে ৬ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ২৪টি লেগুনা মীর মশাররফ হলের সামনে আটকে রাখেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার সঙ্গে মোস্তাফিজ ও অন্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এছাড়া হল সংলগ্ন ঢাকা- আরিচা মহাসড়কের সিএন্ডবি এলাকায় ছিনতাই, ডেইরি গেট ও হলের সামনের দোকানগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন তারা।
মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষের পাশাপাশি অন্তত আরও ১০টি কক্ষ দখল করে সেখানে নানা অপকর্ম পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ছাত্রদের মোট ১১টি হলের অন্তত পাঁচটিতে এমন টর্চার সেল গড়ে তুলেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব কক্ষকে মাদক কারবার, সাধারণ মানুষকে আটকে মারধর করে চাঁদা ও মুক্তিপণ আদায়ে ব্যবহার করেন তারা। শিক্ষাজীবন শেষ হলেও অবৈধভাবে হলে অবস্থান ও কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, 'বর্তমান প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অছাত্ররা টর্চার সেল গড়ে তুলেছে। এসব কক্ষে মাদকের কারবার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।'
হলের কক্ষ অবৈধভাবে দখলে রাখার বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, 'হল থেকে অবৈধ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। ইতোমধ্যে আমরা অন্তত ১৪টি কক্ষ সিলগালা করে দিয়েছি। সেখানে বৈধ শিক্ষার্থীদের তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ